কক্সবাজারের মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের একমাত্র রাখাইনপাড়াটি আজও অবহেলিত। আশপাশের এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি পাড়াটিতে। নেই যোগাযোগের টেকসই ব্যবস্থাও। এখনো কুপিবাতির আলোয় রাত কাটে পাড়ার ২২ পরিবারের। এই পাড়ার শতাধিক বাসিন্দাকে যাতায়াত করতে হয় পাহাড়ি ঝিরিপথ ধরে।
শাপলাপুর বাজারের উত্তরে-পশ্চিমে অবস্থিত গ্রামটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার মানুষ কাঁচা রাস্তার কাদা মাড়িয়ে চলাচল করছে। তাদের অভিযোগের অন্ত নেই।
এই গাঁয়ের যুবক আমুই রাখাইন (৩০) মাধ্যমিক পাস করেছেন চার বছর আগে। পরিবারের হাল ধরার কারণে আর পড়াশোনা এগোয়নি। পানের বরজ দেখাশোনা আর কৃষিকাজই তাঁর জীবিকার উৎস। শুধু তিনি নন, প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরাও এ পেশায় জড়িত।
আমুই রাখাইন বলেন, এখানে ২২ পরিবারের ১২০ জন সদস্য রয়েছে। যাতায়াতে খুব অসুবিধা হয়। জনপ্রতিনিধিরাও কেউ আসেন না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা বিদ্যুৎ। সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
পাহাড়ি এই গ্রামের হেডম্যান মংখিন ও লালা মংয়ের মেয়ে মাথেনু রাখাইন। ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পাস করেছেন। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণীর ইচ্ছা ছিল পুলিশ কর্মকর্তা হবেন। নানা প্রতিবন্ধকতায় আর হয়ে ওঠেনি। উক্যমং নামে তাঁর এক ভাই রয়েছে। সে বর্তমানে পড়ছে অষ্টম শ্রেণিতে।
মাথেনু রাখাইন বলেন, ‘আমার গ্রামে ৩০ জন ছাত্রছাত্রী আছে। সবাই শাপলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। রাস্তার কারণে বৃষ্টি হলে কেউ স্কুলে যেতে পারে না। এখানে বিদ্যুৎও নেই। অনেকবার আবেদন করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি।’
একই কথা বলেছেন শাপলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী লামাচিং রাখাইনও। সে বলল, ‘কিছুদিন আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমিসহ আরও তিনজন শিক্ষার্থী সাইকেল ও শিক্ষা উপকরণ পেয়েছি। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়। বিদ্যুতের সংযোগ দেবে বলে প্রতি পরিবার থেকে ১০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সংযোগ দেয়নি।’
আওয়ে মং ও উক্যমং নামের দুই কিশোর-কিশোরী বলে, ‘আমরা পাহাড়ে থাকতে পছন্দ করি। পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করতে চাই। খেলাধুলার জন্য একটা মাঠ পেলে খুব খুশি হতাম।’
সম্প্রতি মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় এই গ্রামের চার পরিবারকে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। এঁদের একজন চাইলুং রাখাইন (৭০) বাড়ি পেয়ে খুব খুশি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক চৌধুরী বলেন, ‘এরা অবহেলিত এটা স্বীকার করছি। বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করতে গেলে বন বিভাগ থেকে বাধা আসে। তবে খুব শিগগিরই এঁরা বিদ্যুতের সুবিধা পাবেন।’
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ-সুবিধার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রাস্তাঘাটের দিক বিবেচনা করলে জাইকার অর্থায়নে ওই দিকে একটা সড়ক হবে, যেটা হোয়ানক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।’