নগরীর শেখ মুজিব রোডে অবস্থিত কালধারা প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী নাফিজ সাদেকীন। পড়তে ভালোবাসেন, বই টানে তাঁকে। একাধিক বইয়ের এই লেখক ব্যাংকের উচ্চবেতনের চাকরি ছেড়ে বনে যান প্রকাশক। এটাই কাল হলো তাঁর।
প্রকাশনাশিল্পের চরম দুর্দিনের কথা ফুটে উঠল তাঁর কণ্ঠে। বলেন, ২০২১ সালে ৩২টি নতুন বই প্রকাশ করেছি। বিনিয়োগ করেছি প্রায় ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু এক টাকারও বই বিক্রি করতে পারিনি। উল্টো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বইমেলায় স্টল বরাদ্দ, কর্মচারীর বেতন, আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা।
নাফিজ সাদেকীনের মতো এমন পাঁচ শতাধিক কবি, ছড়াকার, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও ঔপন্যাসিক রয়েছেন চট্টগ্রামে। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বই প্রকাশ করেন। তাঁদের সবার অবস্থা একই।
এ ছাড়া ৫৯টি প্রকাশনা সংস্থা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এখন লোকসানের দিন গুনছেন।
চট্টগ্রামের নামকরা প্রকাশনাগুলোর একটি অক্ষরবৃত্ত। এর স্বত্বাধিকারী আনিস সুজন জানালেন, ২০২১ সালে ১৫২টি বই প্রকাশ করতে গিয়ে ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু বিক্রি হয়নি বই।
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করে বলাকা প্রকাশনী। এর কর্ণধার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সব বই গুদামে পড়ে আছে। চট্টগ্রামে সব প্রকাশনা মিলে অন্তত ৩০–৪০ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে করোনায়।’
লোকসানের ভিড়ে আশার আলো দেখছেন বাতিঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ। করোনার মধ্যেই ২০২১ সালে তাঁর প্রকাশনী থেকে ৪০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে আমাদের প্রচুর বই বিক্রি হয়েছে।’
লেখক ও সংগঠক ড. আনোয়ারা আলম বলেন, করোনাকালীন শিক্ষক, লেখক, প্রকাশকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রাষ্ট্র এ ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন।
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম নিপু বলেন, সরকার যদি প্রণোদনা কিংবা সহজ শর্তে প্রকাশকদের ঋণের আওতায় না আনে, তাহলে এই পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
চট্টগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, চট্টগ্রামের ৫০০ প্রেস মালিক পথে বসার অবস্থায়। ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
চসিক কাউন্সিলর ও বইমেলা উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক নেছার উদ্দিন মঞ্জু বলেন, পরিবেশের উন্নতি হলে অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে মেলা করার চিন্তা রয়েছে। একটি মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করেন চট্টগ্রামের প্রকাশক-লেখকেরা। মেলা না হওয়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।