হোম > সারা দেশ > বরগুনা

বঙ্গবন্ধুর সেই বাড়িটি

ফাতিমা পারভীন

১৫ই আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য এক কলঙ্কময় অধ্যায়। এই অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা বলতেন, 'পরিপূর্ণ মানুষ হতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘুরে দেখো, প্রিয় বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখবে'। কিন্তু এই বাড়িটি ঘুরে দেখতে আমার বেশ দেরি হয়েছে। আমার এই সৌভাগ্য হয়েছিল ২০১৪ সালে। ছোটবেলা থেকে বাবার মুখে গল্প শুনলেও প্রথমবারের মতো নিজের চোখে দেখলাম বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িটি। 

আমি তো বাড়িতে কোন বাসিন্দার দেখা পাইনি। দেখলাম, বাড়ির মূল কাঠামো পরিবর্তন না করে এখানেই গড়ে তোলা হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। এখানে সুনিপুণভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী। ভেবেছিলাম এত বড় একজন নেতার বাড়ি, হয়তো বিপুল বিত্তবৈভব ও বিলাসী জীবনের ছোঁয়া পাব। কিন্তু ভেতরে গিয়ে কিছুটা অবাকই হয়েছি। এত আটপৌরে অতিসাধারণ আসবাবপত্র, টিভি, রেডিও আর কাপড়-চোপড় দেখে অবাক না হয়ে আর উপায় কী। 

জাদুঘরটির দেয়াল ও বিভিন্ন জায়গায় ঘাতকের বুলেটের চিহ্ন। এ চিহ্নগুলো দেখলে '৭৫-এর এ হত্যাকাণ্ড কতটা নির্মম ও বীভৎস ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেয়ালে বুলেটের চিহ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি রক্তাক্ত সিঁড়িতে। তবে বেশি সময় নজর স্থির রাখতে পারিনি। জানলাম, গুলিবিদ্ধ হয়ে এই সিঁড়িতেই শহীদ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাদুঘরের প্রথম তলার প্রথম কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধু ও বিশ্বনেতাদের ছবি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রোগ্রামের ছবি ও পরিবারের অন্য শাহাদত বরণকারীদের তৈলচিত্র। দোতলায় বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষ। ১৫ আগস্ট ভোরে বেগম মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল এই কক্ষেই ছিলেন। এই কক্ষটিতে এখন টেলিফোন সেট, রেডিও, রক্তমাখা পোশাক রাখা আছে। সামনে খাবার ঘরে রয়েছে পরিবারের ব্যবহার্য তৈজসপত্র। এসব তৈজসপত্রেও রয়েছে সাদামাটা জীবন যাপনের ছাপ। 

বঙ্গবন্ধুর কক্ষের ঠিক উল্টো দিকে শেখ জামালের কক্ষ। এখানে দেখা গেল তাঁর সামরিক পোশাক। ওই একই তলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শয়নকক্ষ। এ কক্ষটিও অতি সাধারণ। বাড়ির তৃতীয় তলায় শেখ কামালের কক্ষ। পর্যায়ক্রমে বাড়িতে রাখা আছে বঙ্গমাতার ব্যবহার্য অতি সাধারণ জিনিসপত্র, সুলতানা কামালের নতুন সবুজ বেনারসি, লাল ঢাকাই জামদানি, বিয়ের জুতা, ভাঙা কাঁচের চুরি, চুলের কাঁটা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। শিশু শেখ রাসেলের রক্তমাখা ছোট্ট জামাটি দেখে বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। রক্তমাখা জামাটি যেন আমার মাতৃত্বে সজোরে ধাক্কা দিল।

সামনে যেতে যেতে বারবার চোখে পড়ে ছোট্ট শিশু রাসেলের ছবি, তাঁর ব্যবহার্য জিনিসপত্র আর ছোট্ট একটি বাইসাইকেল। এই দৃশ্যগুলো যেন আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। মনে হলো এসব ব্যবহার্য জিনিসের অন্তরালে এখনো ছোট্ট এক শিশুর কোমল স্পর্শ, মান-অভিমান, ভালোবাসার ছোঁয়া লেগে আছে। মুহূর্তে মনে হলো শিশু রাসেল স্কুলে চলে গেছে, স্কুল ছুটি হলে সে আবার ফিরে আসবে; স্পর্শ করবে প্রিয় জিনিসপত্র। মান-অভিমান করবে, হাসবে, খেলবে, দুরন্ত মন তার ছুটবে যোজন যোজন মাইল। হৈ-হুল্লোড়ে মাতিয়ে তুলবে সারা বাড়ি কিংবা নতুন আদুরে কণ্ঠে ডাকবে ‘হাসু আপা’। এসব ভাবতে গিয়ে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না; চলে এলাম। 

বাকরুদ্ধ হয়ে বেরিয়ে আসছিলাম। বের হতে দেখে একজন দর্শনার্থী বললেন, ছয় তলা ভবনটি দেখা যাওয়ার জন্য। আমি তাকে কোনো জবাব দিতে পারলাম না। বেঁকেচুরে হেলে পড়া আমার দেহের ভার কিছুতেই আর বইতে পারছিলাম না। ওই ছোট্ট শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘনের আর্তচিৎকার আজও আমাকে ব্যাকুল করে। 

পরে অবশ্য সেদিনের অদেখা সেই ছয় তলা ভবনটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আবার যখন গিয়েছি মনে হয়েছে, জীবনকে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর বক্তব্য, মানবিকতা, রাজনৈতিক সংকটে প্রদত্ত সমাধান, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গৃহীত পদক্ষেপে গণশক্তি প্রকাশ পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি দেখার পরে তাঁকে অনেক বেশি অনুধাবন করতে পেরেছি। 

আজ বাবা বেঁচে নেই। আগস্ট মাস চলছে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাবার বলা কথাগুলো খুব বেশি মনে পড়ছে। বাবার নির্দেশনায়ই প্রথম এই বাড়িতে গিয়েছিলাম। নিজের চোখে দেখার সুযোগ পেয়েছি একজন মহান ব্যক্তিত্বের অতিসাধারণ জীবনযাপন। আজও 'প্রকৃত মানুষ' হতে পেরেছি কিনা জানি না। তবে মানুষ ও প্রিয় জন্মভূমিকে ভালোবাসতে শিখেছি, এটা বলতে পারি। 

লেখক: ভাইস-চেয়ারম্যান, পাথরঘাটা, বরগুনা

ছাত্রীকে তুলে নিতে বখাটেদের বাধা দেওয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে মারধর, থানায় অভিযোগ

বরগুনায় মধ্যরাতে ফেসবুকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা

ইয়াবাসহ দুলাভাই-শ্যালিকা গ্রেপ্তার

চার নারীসহ পাঁচজনকে কোপানোর ঘটনায় মামলা, জেলহাজতে তিনজন

আমতলীতে ধান কাটতে বাধা দেওয়ায় চার নারীসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম

বরগুনায় বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

তিন দপ্তর ‘ম্যানেজ’ করে দেদার চলছে জাটকা শিকার

গাছ নিধন: দস্যু ও কর্মকর্তার যোগসাজশ

বিএনপি নেতা সুজন মল্লিকের মায়ের ইন্তেকাল

মানুষ এবার ইসলামি দলকে ক্ষমতায় দেখার অপেক্ষায়: চরমোনাই পীর