বরগুনা সদর উপজেলা ঢলুয়া গ্রামে রহস্যময় আগুন লাগছে ঘর-বাড়িতে। কখনো জামাকাপড়, কখনো বা বিছানা ও আসবাবপত্রে এমনকি ঘরের চালা ও রান্না ঘরেও হঠাৎ করেই আগুন লাগছে। এতে আগুন নেভাতে গিয়ে পুড়ে আহতও হয়েছেন কয়েকজন। গত এক মাস ধরে হঠাৎ করে লাগা এমন আগুনে আসবাবপত্র পুড়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। কিন্তু আগুনের সূত্রপাত আবিষ্কার করতে পারছেন না কেউই।
কখনো রাতে, কখনো সকালে, আবার কখনো বিকেলে। হঠাৎ অলৌকিক এমন আগুনে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কে কাজ ফেলে দিনে রাতে বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন পুরুষেরা। আর ঘরের বাইরে রান্না করছেন গৃহিণীরা। অনেকেই সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে। হঠাৎ করে লাগা এমন অলৌকিক আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হচ্ছে। ফলে দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন পার করছেন এলাকাবাসী।
শুধু ওই বাড়িতেই না, এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বাড়িতেও। সম্প্রতি ওই এলাকার রিপন, ময়না সিদ্দিকসহ অন্তত ১০টি ঘরে একইভাবে আগুন লাগা শুরু হয়। কীভাবে এই আগুন লাগছে তা কেউই বলতে পারছেন না। আগুন নেভাতে গিয়ে অনেকেই হাত পা পুড়িয়ে ফেলছে, এ নিয়ে এখন আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। আগুন আতঙ্কে দিন পার করছেন ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার।
আজ শনিবার আবারও আগুন লাগে সেন্টুর ঘরে। তাঁর ঘরের বিছানা, কাপড়-চোপর ও রান্নার ঘর পুড়ে যায়।
ভুক্তভোগী আলেয়া, রেহেনা, নাসিমা সহ এলাকার গৃহিণীরা জানান, প্রতিদিন আগুন লাগায় বাড়িতে থাকার হুমকিতে আছেন তাঁরা। কেউ কেউ হাত পা পুড়িয়ে ফেলছে। এমন করে আগুনে পুড়তে পুড়তে অনেকের পড়ার মতো কাপড়চোপড়ও নেই। এমনভাবে কেন আগুন লাগছে তার সঠিক সুরাহা করা হলে খুব উপকার হবে বলে জানান তাঁরা।
বরগুনা আলিয়া মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক ক্ষেত্রে এমন বিষয়কে স্থানীয়রা ভৌতিক দাবি করলেও এর সত্যতা পাওয়া যায় না। তবে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে গ্রামে এমনটা হতে পারে। আবার ইথেন, প্রোপেন বা বিউটেন গ্যাসও হতে পারে। পরীক্ষা নিরীক্ষায় এর সত্যতা পাওয়া যেতে পারে।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিয়া সারমিন বলেন, ‘আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাব। আসলে সেখানে কি ঘটছে, আগুনের উৎস কি এবং সূত্রপাত ঘটে কি করে এটা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বের করার চেষ্টা করব। আপাতত যতটুকু মনে হয় এটা কোনো দাহ্য কেমিক্যালের কারসাজি। তবে তদন্তে সব বের হয়ে আসবে।’
এদিকে বিষয়টি অলৌকিক না অন্য কিছু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রহস্যময় আগুন লাগার বিষয়টি শুনেছি। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে বলেছি। ওখানে অলৌকিকভাবে আগুন লাগছে নাকি অন্য কোনো বিষয় রয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’