হোম > বিশ্লেষণ

ইমরান খানের পিটিআই মৃত্যুশয্যায়, পাকিস্তানে গণতন্ত্র কত দূর

শিরিন মাজারি ও ফাওয়াদ চৌধুরীর মতো নেতাদের দল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা এবং সর্বশেষ দলের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উমরের পদত্যাগে মোটামুটি নিশ্চিত যে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এখন মৃত্যুশয্যায়। 

গত ৯ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং সেনাবাহিনীর স্থাপনায় হামলার খেসারত দিচ্ছেন তেহরিকের কর্মী-সমর্থকেরা। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লা শুক্রবার (২৬ মে) বলেছেন, ৯ মের ঘটনায় ৪৯৯টি এফআইআর হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চারটি কার্যকর করে সন্দেহভাজন ৩৩ জনকে সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বহু নেতা-কর্মীর বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে এবং হচ্ছে। কয়েক দিনের সহিংস বিক্ষোভের পর পাকিস্তান এখন বেশ শান্ত! 

পিটিআই থেকে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের পদত্যাগ এখনো থেমে নেই। এসব নেতা পদত্যাগের আগে-পরে সামরিক বাহিনীর প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলেছেন। তাতে এটা অনেকখানিই নিশ্চিত যে, পিটিআইয়ের ওপর সেনাবাহিনী ক্ষিপ্ত। ফলে এই পরিস্থিতিতে দলত্যাগী পিটিআই নেতাদের মেরুদণ্ডের জোর নিয়ে হয়তো খুব একটা আপত্তি তোলা যায় না। 

এটা সত্য যে, পাকিস্তানের সমস্ত অভিজাত রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় সামরিক বাহিনীর হয়েই বাঁশি বাজিয়েছে। তবে অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই সেনা নিয়ন্ত্রণ সহ্য করেছে ভুট্টোর পিপিপি এবং বিলুর এএনপি। কিন্তু পাকিস্তানের দুর্বল গণতন্ত্রের কথা বাদ দিলে কোনো রাজনৈতিক দলেরই এমন কোনো অর্জন নেই যা পিটিআইকে ম্লান বা অগ্রাহ্য করার মতো অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। 

বর্তমানে পাকিস্তানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, সামরিক বাহিনীর নিজস্ব বর্ধিত সামাজিক নেটওয়ার্কের সদস্য, যারা আসলে ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাঁরা পিটিআইকে সমর্থন দিতে গিয়ে এখন বিপদে পড়েছেন। তাঁদের এখন উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে। লাহোরি অভিজাতদের দুর্দশার প্রতীক হয়ে উঠেছেন খাদিজা শাহের মতো তারকারা। 

বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার খাদিজা শাহকে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে লাহোর পুলিশ। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী সালমান শাহের মেয়ে। গত ৯ মে লাহোর করপস কমান্ডার হাউসে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

এভাবে সেনা ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে এ ধরনের অপমানজনক আচরণ এত দিনের অভেদ্য এবং সামরিকীকৃত পাঞ্জাবি কেন্দ্রভূমিতে ঐতিহাসিক অভিজাত ঐকমত্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষয় করবে কি না সেটি সময়ই বলে দেবে। 

তবে বাস্তবতা হলো, বেশির ভাগ নিপীড়নের দাগ বহন করবে নামহীন পিটিআই কর্মীরা। 

প্রকৃতপক্ষে, ইমরান খানকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন এবং ক্ষমতাহীন না করা পর্যন্ত এটা খুবই সম্ভব যে, বিপর্যস্ত পিটিআইও সাধারণ নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিতে পারে। ধারণা করা যেতে পারে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তানের পুরোনো সেই মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা দেখতে পারে পিটিআই। পার্টির অবশিষ্ট নেতৃত্ব হয়তো সামরিক শক্তির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি হয়ে যাবে। 

বিগত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, নিরাপত্তা সংস্থা পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখনো মধ্যস্থতা করে যাচ্ছে। যদিও সেই আড়ম্বর আগের মতো আর নেই। 

পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, যাদের অভেদ্য ও নিরাপদ অভিজাতদের মধ্যকার সংঘাতের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এই মানুষগুলোই মূলত অত্যাচারিত হবে, সামরিকীকৃত রাজনৈতিক অস্তিত্বের ধাক্কা সহ্য করতে থাকবে। 

এখন প্রশ্ন হলো, পিটিআইয়ের পতন কি পাকিস্তানকে এমন একটি রাজনীতির দিকে নিয়ে যাবে, যার পুনরাবৃত্তি চক্রকে ভেঙে দিতে পারে? 

স্বল্প মেয়াদে বেশির ভাগ রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য পিটিআই কর্মীদেরই সহ্য করতে হবে। যেসব অন্তঃপ্রাণ কর্মী কখনো সামনের সারিতে আসেন না, তাঁদের কিন্তু একটি বিস্তৃত স্তর রয়েছে। স্বীকৃত রাজনৈতিক কর্মী এবং নীরব কর্মী উভয়েই পেছনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বলে মনে করেন না, তবে তাঁদের দৃঢ় রাজনৈতিক মতামত রয়েছে। তাঁরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ভয়ে সাময়িকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নীরব রয়েছেন। 

এই অদৃশ্য কর্মীরা সামরিক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সামনে এগোনোর মধ্যে কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পান না। সেটি গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে অনেকখানি স্পষ্ট হয়েছে। গ্যালপের জরিপ বলছে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তাও এখন তুঙ্গে। ৬০ শতাংশের বেশি পাকিস্তানি তাঁর অবস্থানকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তাঁরা তো সবাই পিটিআইয়ের বা কোনো সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী নন। তাঁদের জন্য এখন সবচেয়ে সম্ভাব্য বিকল্প হলো পশ্চাৎপসরণ। পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সমাজের গভীর কাঠামোগত সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে একটি সুসংবাদ হিসেবেই পাঠ করা যেতে পারে। 

ক্ষমতাসীন পিডিএম জোটের হর্তাকর্তারা যতই বলুন, অর্থনীতি রাতারাতি পুনরুদ্ধারের কোনো পথ নেই। সম্পদের ওপর দখলদারি এখনো অব্যাহত রয়েছে, অসাধু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণ দায়মুক্তি ভোগ করছেন। এ ধরনের একটি ব্যবস্থার মধ্যে আইএমএফের ঋণ পাকিস্তানকে রক্ষা করবে, এটি কষ্টকল্পনা! 

গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে দেখা গেছে ইমরান খানের পক্ষে জনমত গঠনে এগিয়ে এসেছেন অনেক নতুন মুখ। তাঁদের অধিকাংশ তরুণ। অবশ্য পিটিআই কর্মীদের অধিকাংশই তরুণ। তাঁরা একটি প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির পক্ষে জমায়েত হয়েছিলেন। সামরিক বাহিনী তাদের নিজেদের স্বার্থেই এখন এই তরুণদের দমন করছে। কিন্তু এই বিস্তৃত জনগোষ্ঠী এমন একটি রাজনৈতিক প্রকল্পে আগ্রহী নয়, যার কেন্দ্রে রয়েছে রাষ্ট্র ও সমাজের গণতন্ত্রীকরণের আকাঙ্ক্ষা—এমনটি ভাবলে বোকামিই হবে। 

পিটিআইয়ের ধ্বংসস্তূপের ওপর একটি প্রগতিশীল রাজনীতির ভিত্তি তৈরি হবে এমনটি ভাবা বা আকাঙ্ক্ষা করাটা হয়তো বালখিল্যই হবে। তবে অন্তত আংশিকভাবে সত্য যে পিটিআই নতুন আকারে পুনরুত্থিত হতে পারে, যার প্রাণশক্তি হবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অদৃশ্য কর্মী বাহিনী, যাদের আকাঙ্ক্ষা ‘গণতন্ত্র’। 

পাকিস্তানি পত্রিকা ডন অবলম্বনে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!

কোন দেশে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক, বাংলাদেশের চিত্র কেমন