হোম > বিশ্লেষণ

করোনা ঠেকাতে গণহারে পরীক্ষা কতটা কার্যকর

কটন বাডসদৃশ তুলার কিট নাকের মধ্যে কিংবা গলার ভেতরে প্রবেশ করিয়ে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা এখন প্রায় সবার কাছেই সুপরিচিত। মহামারির এই দুই বছরের পরে কিছু দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার এই প্রচলিত পরীক্ষা এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিশেষত গণহারে পরীক্ষার জেরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও কোটি কোটি টাকা খরচের বিষয়টি নিয়ে ভুরু কোঁচকাচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এ প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। রয়টার্স বলছে, গণহারে পরীক্ষার কথা উঠলে প্রথমেই আসে ডেনমার্কের কথা; দেশটি শুরুতে করোনা পরীক্ষায় বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে ছিল। তবে সেই পদক্ষেপ কতখানি কার্যকর ছিল তার সত্যানুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক ও সরকারের কোভিড উপদেষ্টা দলের সদস্য জেনস লুন্ডগ্রেন বলেন, ‘আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় এত বেশি পরীক্ষা করেছি যা অনেকটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের।’ 

অথচ জাপান গণহারে করোনা পরীক্ষা না করিয়েও মহামারিতে সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে। 

আবার ব্রিটেন, স্পেনসহ অন্যান্য দেশগুলো করোনা পরীক্ষায় জোর দিয়েছে। চীনের ‘জিরো-কোভিড’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বারবার পরীক্ষা করানো হয়েছে। এমনকি এই পরিকল্পনার সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল আউট ব্রেক অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স নেটওয়ার্কের প্রধান ডেল ফিশার বলেন, ‘আমাদের আরও শিখতে হবে এবং কেউই পুরোপুরি সঠিক কিছু করেনি।’ 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর সমস্ত সন্দেহভাজন কেসের ক্ষেত্রে বারবার পরীক্ষা করার আহ্বান জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যা বিশ্বব্যাপী গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুঝুঁকি, সেই সঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকি বুঝতে সাহায্য করেছে বিজ্ঞানীদের। 

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বর্তমানে তুলনামূলকভাবে মৃদু ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ, ভ্যাকসিন ও আরও কার্যকর চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারদের উচিত কৌশলগত নীতি বিবেচনা করা। সতর্ক না হলে ক্রমশ পরিবর্তনশীল এই ভাইরাসের কাছে পিছিয়ে পড়তে পারে বিশ্ব। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকাগুলো কখনো উপসর্গহীন ব্যক্তিদের গণহারে পরীক্ষার সুপারিশ করেনি—যেমনটি বর্তমানে চীনে হচ্ছে। গণহারে পরীক্ষার খরচ এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কিত তথ্যাদির যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গত দুই বছরে ডেনমার্কের ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন জনসংখ্যা বিনা মূল্যে ১২৭ মিলিয়নেরও বেশি র‍্যাপিড ও পিসিআর পরীক্ষা করেছে। ড্যানিশ ক্রিটিক্যাল সাপ্লাই এজেন্সি অনুসারে, এই পরীক্ষার জন্য ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে ডেনমার্ক। 

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, প্রতিবেশী নরওয়ের জনসংখ্যা ডেনমার্কের অনুরূপ। কিন্তু নরওয়ে মাত্র ১১ মিলিয়ন পিসিআর পরীক্ষা করেছে। আর প্রায় দ্বিগুণ জনসংখ্যার সুইডেন ১৮ মিলিয়নের মতো পরীক্ষা করা হয়েছে। 

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ডেনমার্কের গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক ক্রিস্টিন স্ট্যাবেল বেন জানান, ডেনমার্কের কৌশলটি ব্যয়বহুল এবং তাতে সুনিশ্চিত ফলাফল নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

যদিও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও ড্যানিশ সরকারের দাবি, গণহারে পরীক্ষার ফলে সংক্রমণের হার কমেছে এবং জনগণকে আবারও স্বাভাবিকভাবে সমাজে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। 

গত বছর প্রকাশিত ডেনমার্কে হওয়া একটি সমীক্ষা অনুসারে, করোনা পরীক্ষা ও তৎপরবর্তী পদক্ষেপ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করেছে। যদিও অন্যান্য রোগ বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের অনুমান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। 

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল স্ক্রিনিং কমিটির সঙ্গে কাজ করা ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুলের সিনিয়র লেকচারার অ্যাঞ্জেলা রাফেল বলেন, ‘দাবি ছিল যে গণপরীক্ষা মহামারিকে তার ট্র্যাকে থামিয়ে দেবে এবং ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ কমিয়ে দেবে—কিন্তু তা হয়নি।’ 

এ ছাড়া ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অনেকেই করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও আইসোলেশনে যাননি। মাত্র ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ আইসোলেশনে পুরোটা সময় বাড়িতে থেকেছেন। 

ইংল্যান্ডে বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষা এখন কেবল প্রযোজ্য সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকা ব্যক্তি এবং যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের জন্য। অন্যদের ক্ষেত্রে এমনকি উপসর্গ থাকলেও করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য অর্থ দিতে হচ্ছে। 

এদিকে কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ বিভাগের অধ্যাপক মাধু পাই বলেন, কিছু ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদেরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় করোনা পরীক্ষার পরিমাণ ইচ্ছাকৃতভাবে হ্রাস করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের আরও বিপজ্জনক ধরন আবির্ভূত হলে এই কৌশল বিপর্যয়কর হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

শাহেনশাহ-ই-পাকিস্তান: আসিম মুনিরের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার স্বপ্ন কি তাসের ঘর

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

হাসিনার ভাগ্যে কী আছে

ইমরানকে সরানোর খেসারত: পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নীরব অভ্যুত্থান, দেশ শাসনের নয়া মডেল