হোম > নারী

আফগানিস্তানের যে গল্পগুলো কাল্পনিক নয়

ফিচার ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রবেশপথে কড়া নজরদারি। বোরকা ছাড়া কোনো নারী ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। আপনি যতই অসুস্থ হন, আপনাকে বোরকা পরে এসে তারপর চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। যদি ততক্ষণে আপনি জীবিত থাকেন।

গল্প নয়, বলছি আফগানিস্তানের বাস্তবতা। ৫ নভেম্বর থেকে ঠিক এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে আফগান নারীদের। আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবা দাতা সংস্থা মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স জানিয়েছে, কিছু নিষেধাজ্ঞা ৫ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমে গিয়েছিল, যদিও পরে তা স্থিতিশীল হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরে নারী রোগী, নার্স ও কর্মীদের জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হলে বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি একটু গরম হলে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হয় বলে জানা গেছে।

এবার বলি এক নার্সের গল্প। আফগানিস্তানের বাস্তবতায় এই গল্প কাল্পনিকই বটে। কিন্তু এই গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক নয়। গল্পের মূল চরিত্রের নাম রয়া করিমি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁকে বাল্যবিবাহের অন্ধকার জগতে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ১৫ বছর বয়সের মধ্যে তিনি এক সন্তানের জননী হন। আফগানিস্তানে তিনি কঠোর সামাজিক বিধিনিষেধের মধ্যে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু ২০১১ সালে রয়া তাঁর মা ও ছেলেকে নিয়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে নরওয়েতে আশ্রয় নেন। দীর্ঘ ও বিপজ্জনক যাত্রার পর নরওয়েতে পৌঁছে নতুন করে জীবন শুরু করেন রয়া। তিনি নরওয়ের ভাষা শেখেন, একাধিক কাজ করেন এবং পরে একজন নার্স হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে অসলোর একটি হাসপাতালে চাকরি করেন।

করোনা পুরো বিশ্ববাসীর জীবন বদলে দেয়। তেমনই রয়ার জীবনেও বদল আসে। লকডাউনের সময় শরীর সুস্থ রাখতে রয়া বডিবিল্ডিং শুরু করেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যখনই আমি জিমে যাই, আমার মনে পড়ে, আফগানিস্তানে এমন একটা সময় ছিল, যখন আমার স্বাধীনভাবে ব্যায়াম করারও অনুমতি ছিল না।’ প্রতিবার ওজন তোলাকে তিনি হারানো স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। জিমে রয়ার পরিচয় হয় কমল জালালউদ্দিনের সঙ্গে। তিনিও একজন বডিবিল্ডার। কমলের বডিবিল্ডিংয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সমর্থন রয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়। রয়া বলেন, ‘কমলের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমি খেলাধুলা করতাম, কিন্তু পেশাদার স্তরে নয়। তাঁর সমর্থন আমাকে প্রতিযোগিতামূলক এবং ট্যাবু ভাঙার পথ বেছে নেওয়ার সাহস জুগিয়েছে।’

ছবি: সংগৃহীত

দেড় বছর আগে রয়া নার্সিংয়ের চাকরি ছেড়ে পেশাগতভাবে বডিবিল্ডিং জগতে প্রবেশ করেন। ভিন্ন দেশে অবস্থান করলেও রয়া বহন করেন নিজের দেশের পরিচয়। আর তাই রয়ার এই সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনকও বলা চলে।

মঞ্চে তিনি যে বিকিনি, চুল ও কড়া মেকআপ ব্যবহার করেন, তা তাঁর স্বদেশের সামাজিক রীতিনীতি এবং বর্তমান বিধিনিষেধ থেকে শত মাইল দূরে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা, সহিংসতা এবং মৃত্যুর হুমকির শিকার হয়েছেন তিনি। রয়া এই মন্তব্যগুলোকে পাত্তা দেন না। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘লোকেরা শুধু আমার চেহারা আর আমার বিকিনি দেখে। তবে এই চেহারার আড়ালে আছে বছরের পর বছর ভোগান্তি, প্রচেষ্টা আর অধ্যবসায়। এই সাফল্য সহজে আসেনি।’ তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়ার জন্য সম্পূর্ণ নেতিবাচক নয়; এটি তাঁকে আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। সেখানে তিনি স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের পরিচয় পুনর্গঠনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। রয়া এখন ইন্টারন্যাশনাল ফিটনেস অ্যান্ড বডিবিল্ডিং ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত এপ্রিল মাসে স্টোপেরিয়েট ওপেন বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় ‘ওয়েলনেস’ ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। এরপর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয় তাঁকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে স্থান নিশ্চিত করে।

সূত্র: বিবিসি, দ্য ডেইলি সান

বড়দিনের বিখ্যাত গানগুলোর নেপথ্যের নারীরা

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

‘মেয়েদের ফুটবলে বাধা দিতে খোঁড়া হয়েছিল মাঠ’

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদে আসনের দাবি

জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করতে পারেন না নারীরা

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে শাহেলীর লড়াই

১১ মাসে নির্যাতনের শিকার ২,৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু