পলক মুচ্ছল। ভারতীয় এই কণ্ঠশিল্পীর গান শুনে বিমোহিত হয়নি, এমন মানুষ কমই আছে। শুধু সংগীত নয়; তিনি যে দাতব্যকাজ করেন, আজ বরং সে গল্পই হোক।
১৯৯২ সালের ৩০ মার্চ মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন পলক। বাবা রাজকুমার মুচ্ছল এবং মা অমিতা। তাঁর ছোট ভাই পলাশ মুচ্ছলও মিউজিক-কম্পোজার এবং দাতব্যকাজের অংশীদার।
কীভাবে শিশুদের জন্য কাজ করেন
মাত্র সাত-আট বছর বয়সে এক ট্রেনযাত্রায় তিনি গরিব শিশুদের অবস্থা দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে। সে ঘটনা তাঁর জীবনে গভীর ছাপ রাখে। হয়তো তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, একদিন এই শিশুদের পাশে দাঁড়াবেন। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কল্যাণজি-আনন্দজি লিটল স্টার গ্রুপে গান শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে আহত সেনাদের পরিবারের জন্য গানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। এরপর সেভিং লিটল হার্টস নামে একটি দাতব্য মিশন শুরু করেন তিনি ছোট ভাই পলাশের সঙ্গে। তাঁরা নিয়মিত স্টেজ শো ও কনসার্ট আয়োজন করতে থাকেন। এ থেকে পাওয়া অর্থ দুস্থ হৃদ্রোগে আক্রান্ত শিশুদের অপারেশনের কাজে ব্যয় করা হয়। পলকের দাতব্য সংস্থার নাম পলক-পলাশ চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন। প্রতিটি কনসার্টে পাওয়া পারিশ্রমিকের বড় অংশ তাঁরা এই ফাউন্ডেশনে দান করেন।
তাঁর কাজ
৩ হাজার ৮০০-র বেশি হৃদ্রোগে আক্রান্ত শিশুর সার্জারির খরচ বহন করে পলক মুচ্ছল এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ২০২৪ সালের জুনে তাঁর সেভিং লিটল হার্টস মিশন ৩ শিশুর সফল সার্জারির মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে। এ বছর এই মিশনের ২৫ বছর পূর্তি হয়। একই সঙ্গে তাঁদের এই উদ্যোগ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পায়।
যেভাবে কাজ করেন
পলক-পলাশ চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিশুদের জন্য কাজ করে চলেছেন পলক ও পলাশ মুচ্ছল। তাঁদের কনসার্ট ও স্টেজ শোর পারিশ্রমিকই এই ফাউন্ডেশনের তহবিল সংগ্রহের প্রধান উৎস। সংগৃহীত অর্থ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের মূল্যায়ন, চিকিৎসাগত অবস্থা ও আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করে সার্জারিতে ব্যয় করা হয়।
পুরস্কার
হৃদ্রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাতব্যকাজ পরিচালনার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ও লিমকা বুক অব রেকর্ডসের বিশেষ সম্মাননা। খুব অল্প বয়সেই অসামান্য সমাজসেবার জন্য তাঁকে ২০০০ সালে দেওয়া হয় জাতীয় শিশু পুরস্কার। পাশাপাশি সংগীতে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন জি সিনে অ্যাওয়ার্ড, স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ডসহ আরও বেশ কিছু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। জীবন বাঁচানো প্রতিটি শিশুর হাসিই পলকের কাছে বিশেষ। অপারেশনের জন্য অপেক্ষমাণ শিশুদের দীর্ঘ তালিকা তাঁকে ভীষণভাবে পীড়া দেয়। তাঁর দাতব্য কার্যক্রম মূলত কনসার্টের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিভিন্ন সময় তহবিল সংকট দেখা দেয়। তখন তিনি ও তাঁর পরিবার নিজেদের সঞ্চয় ব্যবহার করে সার্জারি চালিয়ে যান।
পলক তাঁর সেভিং লিটল হার্টস মিশনকে আরও বিস্তৃত করার স্বপ্ন দেখেন, বিশেষ করে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তাঁর লক্ষ্য হৃদ্রোগে আক্রান্ত আরও বেশিসংখ্যক শিশুকে বিনা মূল্যে সার্জারির সুযোগ করে দেওয়া। একই সঙ্গে তিনি বৈশ্বিক সচেতনতা ও অংশীদারির সুযোগ তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক কনসার্টের সংখ্যা বাড়ানোর কথাও ভাবছেন।