অন্তর্বর্তী সরকার গত সেপ্টেম্বরে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতিমালা অনুমোদন করে। টেলিযোগাযোগ খাতের অংশীজনদের অনেকে মনে করছেন, এই নীতিমালার কিছু ধারা দেশীয় উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। আর রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, অনির্বাচিত সরকারের করা এই টেলিকম নীতিমালা গ্রহণযোগ্য নয়। টেলিকম নীতিমালার মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়ের নীতিমালা গণতান্ত্রিক সরকারের করা উচিত; যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে।
আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর হলিডে ইন হোটেলে ‘আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের চ্যালেঞ্জ: টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনীতিবিদেরা এসব কথা বলেন। টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এই বৈঠকের আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত টেলিকম নীতিমালাকে ‘ক্রিটিক্যাল (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘এটা ক্রিটিক্যাল একটা ইকোনমিক ডিসিশন (অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত)। এ রকম একটা ক্রিটিক্যাল ডিসিশন নিতে গেলে এখানে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট পলিসি (বিনিয়োগ নীতি), টেলিকম এবং আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি) পলিসির একটা বিশদ ব্যাখ্যার দরকার হচ্ছে। স্টেক হোল্ডারদের মতামত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটা করতে হবে।’
এ ধরনের নীতিমালা-বিষয়ক সিদ্ধান্ত ‘গণতান্ত্রিক সরকারের নেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ডেমোক্রেটিক অর্ডারের (গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা) দিকে যাচ্ছি। এই ১৪-১৫ মাস দেশে কোনো ডেমোক্রেটিক অর্ডার নাই। অনির্বাচিত সরকার আছে। সুতরাং, উনাদের একটা লিমিটেশন (সীমাবদ্ধতা) আছে। সেই লিমিটেশনের মধ্যে থেকে কাজ করার ব্যবস্থা এবং বড় বড় ডিসিশনগুলো দিন শেষে গণতান্ত্রিক অর্ডারের রিপ্রেজেনটেটিভ ক্যারেক্টার—যারা জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকে—তাদেরই নেওয়া উচিত।’
দেশীয় উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমি আপনাদের এটা আশ্বস্ত করতে চাই, ডেমোক্রেটিক অর্ডার ফিরে আসার পর এই বিষয়গুলো রিভিউ (পর্যালোচনা) করা হবে। রিভিউর মাধ্যমে দেশের ইন্টারেস্ট (স্বার্থ), জনগণের ইন্টারেস্ট, ইনভেস্টরের ইন্টারেস্ট সুরক্ষা করা একটি ডেমোক্রেটিক্যালি ইলেক্টেড গভমেন্টের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আমি নিশ্চিত—আগামী দিনে যারা নির্বাচিত হবে—তারা পালন করবে।’
বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নীতিমালায় দেখা যাচ্ছে, দেশীয় কোম্পানির হাতে যাতে না থাকে, বিদেশি কোম্পানির হাতে চলে যায়—এমন নীতিমালা করা হয়েছে। আমরা দেখছি, বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি নিজস্ব ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চাই। এই খাতের পাঁচ-সাত লাখ লোকের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে ফেলে নীতিমালা মানা হবে না। এই নীতিমালা গ্রহণযোগ্য হবে না। এই নীতিমালা স্থগিত করা দরকার। সামনে নির্বাচন। কাজেই এই ধরনের তাড়াহুড়ার কোনো নীতিমালার প্রয়োজন নেই।’
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির। বক্তব্য দেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল, টেলিযোগাযোগ খাতের অংশীজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।