শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ
১৬ বছরের নিচে সবার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধের ঘোষণা বেশ কয়েক মাসে আগে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার সেই ঘোষণা আইন হিসেবে চালু করতে চলেছে দেশটি। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর থেকে এমন আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে দেশটি।
আইন কার্যকর হলে অস্ট্রেলিয়ার কোনো কিশোর-কিশোরী আর নিজের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যবহার করতে পারবে না। ইনস্টাগ্রাম এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের প্ল্যাটফর্মে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে ৩ লাখ অস্ট্রেলিয়ান আছে, যারা শিগগির অ্যাকাউন্ট হারাতে যাচ্ছে।
আইন করা হলেও এখন পর্যন্ত অনেক কিছুই সরকার নির্দিষ্টভাবে ঠিক করে দেয়নি। এ নিয়েও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং দেশ-বিদেশের অনেকে এই নীতির সমালোচনা করছেন। এখানে বয়স যাচাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে প্রতিটি প্ল্যাটফর্মকে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে। তবে ব্যবহারকারী ভিডিও সেলফি বা সরকারি পরিচয়পত্র জমা দিয়ে বয়স প্রমাণ করতে পারবে।
কোন প্ল্যাটফর্ম এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে, সেটিও পুরোপুরি নির্ধারিত নয়। তবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, টুইচ ও কিক নিশ্চিতভাবে এই আইনের আওতায় আছে। প্রচুর শিক্ষামূলক কনটেন্ট থাকা সত্ত্বেও ইউটিউবকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে রোবলক্স, পিন্টারেস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ এখনো তালিকার বাইরে রয়েছে। তালিকা পর্যালোচনা চলছে এবং প্রয়োজনে আরও প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করা হতে পারে নিষিদ্ধের তালিকায়।
সর্বোচ্চ ৩২ মিলিয়ন ডলার জরিমানা
কিশোরেরা যে এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের দিকে ঝুঁকবে, সে বিষয়ে সরকার অবগত। নকল আইডি ব্যবহার, ছবি এডিট করে বয়স বাড়িয়ে দেখানো, এমনকি এআই দিয়ে মুখের বয়স বদলে দেওয়া, এমন সব সম্ভাবনার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিজেদের মতো ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
তবে আইন যদি না মানে, তাহলে প্ল্যাটফর্মগুলোকে সর্বোচ্চ ৩২ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। আসলে সমস্যাটা হলো, ঠিক কী করলে আইন মানা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে, সেটিও এখনো পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টে দুই কিশোরের চ্যালেঞ্জ
এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেশ সোচ্চার অস্ট্রেলিয়ার কিশোর-কিশোরীরা। তারা বলছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বদলে অনলাইন প্রতারণা এবং ক্ষতিকর কনটেন্ট সরাতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এমনকি মানবাধিকারকর্মীদের সমর্থনে ১৫ বছর বয়সী দুজন কিশোর এই নীতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছে। তাদের যুক্তি, এই আইন তাদের স্বাধীনভাবে যোগাযোগের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তাদের একজন নোয়া জোন্স বিবিসিকে বলে, অনলাইনের ক্ষতিকর দিক আছে ঠিকই; তাই বলে ১৬ বছরের নিচের সবাইকে নিষিদ্ধ করাই সমাধান নয়; বরং অনলাইন থেকে ক্ষতিকর কনটেন্ট সরানোর নিয়ম চালু করা এবং শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সরকারের।
সব মিলিয়ে আইনটি বাস্তবায়নের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া একধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছে। এই আইনের একদিকে আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষতি থেকে শিশুদের সুরক্ষা, অন্যদিকে রয়েছে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও প্রযুক্তিগত বাস্তবতা। সবকিছু মিলিয়ে আগামী কয়েক মাসে এ বিষয়ে বিশ্বের নজর থাকবে অস্ট্রেলিয়ার ওপর।
সূত্র: বিবিসি ও ব্লুমবার্গ