হোম > প্রযুক্তি

এআই বিনিয়োগের ‘সুপারসাইকেল’ বছর

মোস্তাফিজ মিঠু

চলতি বছরকে এআইয়ের জন্য ‘স্কেল-আপ ইয়ার’ বললে ভুল হবে না। স্টার্টআপ ফান্ডিং থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টার, বিদ্যুৎ এনার্জি অবকাঠামো, জাতীয় নীতি—সবখানে এআই এখন ভূরাজনীতির খেলা।

বছরের শেষ দিকে প্রকাশিত একাধিক ডেটাসেট ও প্রতিবেদন দেখাচ্ছে, এ বছরের এআই খাতে মোট বিনিয়োগ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি এবং বহু সূচকে রেকর্ড। উদাহরণ হিসেবে, ক্রাঞ্চবেস ডেটা অনুসারে ২০২৫ সালে এআই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ২০২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, ২০২৫ সালে শুধু এআই স্টার্টআপগুলোই রেকর্ড ১৫০ বিলিয়ন ডলার ফান্ডিং তুলেছে। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো পরস্পর প্রতিযোগিতায় নেমেছে এআই নিয়ে—কে বেশি কম্পিউট তৈরি করবে, কে বেশি ডেটা সেন্টার গড়বে, কে ভবিষ্যতের এআই ক্ষমতা নিজের হাতে রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্র

এ বছর এআই বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ডেটা প্ল্যাটফর্মের হিসাব অনুযায়ী, শুধু চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে এআই খাতে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ১২০-১২৫ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থের বড় অংশ গেছে এআই স্টার্টআপ, ফাউন্ডেশন মডেল ল্যাব, ডেটা সেন্টার এবং জিপিইউভিত্তিক কম্পিউট অবকাঠামো তৈরিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের সবচেয়ে আলোচিত দিক ছিল মেগা স্কেল প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট। ওপেনএআই, অ্যানথ্রোপিক, এক্সএআইয়ের মতো এআই ল্যাবগুলো একেক রাউন্ডে ৫-৪০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত মূলধন সংগ্রহ করেছে। এসব বিনিয়োগে নেতৃত্ব দিয়েছে বড় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম, প্রযুক্তি জায়ান্টদের করপোরেট ভেঞ্চার শাখা এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ তহবিল। এর উদ্দেশ্য ছিল একটাই—বৃহৎ ভাষা মডেল এবং পরবর্তী প্রজন্মের এআই সিস্টেম প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল কম্পিউট সক্ষমতা নিশ্চিত করা।

এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর এআই ডেটা সেন্টার এবং অবকাঠামোতে নজিরবিহীন বিনিয়োগ ঘোষণা আসে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো স্টারগেট প্রকল্প, যেখানে ওপেনএআই, সফটব্যাংক এবং ওরাকল মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে সর্বোচ্চ ৫০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী এআই কম্পিউট হাবে পরিণত করা, যাতে ভবিষ্যতের এআই উদ্ভাবনে দেশটি নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই বিনিয়োগে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে পৌঁছায় এ বছর; যাকে বলা হচ্ছে ‘এআই অ্যাজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার’। ইউরোপে সরাসরি স্টার্টআপ ফান্ডিংয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বড় আকারের ডেটা সেন্টার ও গবেষণায়। ফ্রান্স এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে। ২০২৫ সালে দেশটি এআই খাতে প্রায় ১০৯ বিলিয়ন ইউরো প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট প্লেজ ঘোষণা করে। এই বিনিয়োগের বড় অংশ এসেছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক তহবিল থেকে। এটি মূলত হাই-ক্যাপাসিটি ডেটা সেন্টার এবং এআই কম্পিউট ক্লাস্টার নির্মাণে ব্যয় হওয়ার কথা। ফ্রান্সের লক্ষ্য ছিল ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো কম্পিউট সক্ষমতা দেওয়া।

জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসেও এ বছর বড় অঙ্কের বিনিয়োগ হয়েছে এআই চালিত শিল্প অটোমেশন, রোবোটিকস এবং গবেষণামুখী কম্পিউট অবকাঠামোয়। যদিও পরিমাণ ফ্রান্সের তুলনায় কিছুটা কম।

ভারত

ভারত এ বছর এআই বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশটি ঘোষণা করে ‘ইন্ডিয়ান এআই মিশন’। এর আওতায় প্রায় ১০ হাজার ৩০০ কোটি রুপি বা প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য ছিল দেশীয় এআই স্টার্টআপ, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি জিপিইউ কম্পিউট অ্যাকসেস তৈরি করা। ভারতের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল বড় মডেল বানানোর চেয়ে এআইকে সাশ্রয়ী করে তোলা এবং দেশীয় শিল্প ও সেবা খাতে দ্রুত প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

চীন

চীনের এআই বিনিয়োগ কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভিন্ন হলেও পরিসরে তা কোনো অংশে কম নয়। চীনে এআই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে মূলত রাষ্ট্রীয় তহবিল ও বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ক্যাপেক্সের মাধ্যমে। সরাসরি স্টার্টআপ ভিসি বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও সামগ্রিক ব্যয় ছিল অনেক বেশি। চলতি বছর চীন সরকার কমপক্ষে ১৫০ বিলিয়ন ইউয়ান কিংবা প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ নতুন রাষ্ট্রীয় ভেঞ্চার ফান্ড চালু করে; যার বড় অংশ বরাদ্দ করা হয় এআই-সম্পর্কিত ‘হার্ড টেক’ খাতে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এআই চিপ, সেমিকন্ডাক্টর, উন্নত কম্পিউটিং সিস্টেম, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও এআই চালিত শিল্প অবকাঠামো। তবে এসব বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা এবং দেশীয় এআই সক্ষমতাকে শক্তিশালী করা।

একই সঙ্গে চীনের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এআই অবকাঠামোয় বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে ২০২৫ সালে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বাইটড্যান্স একাই বছরে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ইউয়ান বা ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্যাপেক্স ব্যয় করেছে। এর বড় অংশ গেছে এআই প্রসেসর, ডেটা সেন্টার ও নিজস্ব মডেল ট্রেনিং সক্ষমতা বাড়াতে। সব মিলিয়ে এ বছর চীনের এআই বিনিয়োগের মূল ফোকাস ছিল চিপ, কম্পিউট এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত এআই সক্ষমতা।

মধ্যপ্রাচ্য

এ বছর মধ্যপ্রাচ্য এআই বিনিয়োগে দ্রুত উত্থানশীল অঞ্চল। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব মিলিয়ে এআই খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এসব বিনিয়োগের বড় অংশ গেছে ডেটা সেন্টার, ক্লাউড এআই অবকাঠামো এবং এআই প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে। এই অঞ্চলের মূল লক্ষ্য ছিল তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে এসে ভবিষ্যতের এআইনির্ভর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করা।

সব মিলিয়ে এ বছর এআই খাতে বিনিয়োগ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই এই বিনিয়োগ প্রতিবছর বাড়তে থাকবে। কারণ, ভবিষ্যতে এআই দিয়ে নিজেদের শক্তিকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করবে পরাশক্তির দেশগুলো।

যুক্তরাজ্য

এ বছর যুক্তরাজ্য এআই বিনিয়োগ বড় আকারে না করে নির্দিষ্ট খাতে এবং কাজের দক্ষতা বাড়ানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ ঘোষণা করা হয়, যার বড় অংশ বরাদ্দ করা হয় এআই স্টার্টআপ স্কেল-আপ, গবেষণা ল্যাব এবং পাবলিক সার্ভিসে এআই প্রয়োগে।

যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ কৌশলের মূল উদ্দেশ্য ছিল এআইকে সরাসরি অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা; বিশেষ করে স্বাস্থ্য, ফিন্যান্স ও প্রশাসনিক সেবায়।

সূত্র: ক্রাঞ্চবেস নিউজ, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, রয়টার্স এবং ওয়াশিংটন পোস্ট

মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের ভবিষ্যৎ কী

২০২৬ সালে আলোচনায় থাকবে যেসব প্রযুক্তি

সার্চিংয়ের পাশাপাশি ক্রোম ব্রাউজারে যেসব কাজ করা যায়

প্রযুক্তির দখল কার হাতে

গুগলের নতুন এআই টুল

বৈদ্যুতিক জাহাজ নির্মাণশিল্পে চীনের আধিপত্য

পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা কতটুক: জেনে নিন বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড

ভুয়া ওয়েবসাইট চেনার উপায়

আগুনের ঝুঁকিমুক্ত ব্যাটারি বানালেন বিজ্ঞানীরা

উসকানিমূলক কনটেন্ট বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার