টিম হোটেলের লিফটে জামাল ভূঁইয়াকে দেখেই ক্রিকেট দলের এক কোচের প্রশ্ন—‘চাপ মনে হচ্ছে?’ জামালও উত্তর দিলেন সপাটে, ‘চাপ সামলানোই আমাদের কাজ।’ সঙ্গে জামাল এটাও উপলব্ধি করলেন, শুধু ফুটবল অঙ্গনের মানুষ নয়, আজকের ম্যাচে তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা ক্রীড়াঙ্গন। প্রতিপক্ষ যে আর কেউ নয়, ভারত। যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা যেমন ঘৃণার, তেমন ভালোবাসারও।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দুই দলের কেউই আর মূল পর্বের দৌড়ে নেই। তবু এমন এক ম্যাচে সমর্থকদের উন্মাদনার মাঝে পয়েন্টের সব হিসাবনিকাশ তুচ্ছ হয়ে পড়ে। যেখানে জয় হলো শেষ কথা। সেই জয়ের অপেক্ষাটা বাংলাদেশের জন্য ২২ বছরের।
সর্বশেষ ২০০৩ সাফের সেমিফাইনালে মতিউর মুন্নার বিখ্যাত গোল্ডেন গোলে এসেছিল ভারতকে হারানোর উপলক্ষ। হামজা-শমিতদের কাঁধে চড়ে বাংলাদেশ কি পারবে সেই আক্ষেপ ঘোচাতে। জাতীয় স্টেডিয়ামে রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচ।
ভারত সম্প্রতি নতুন পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন কোচ খালিদ জামিল চেষ্টা করছেন দলটা গুছিয়ে নিতে। এখন পর্যন্ত সেভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। তাই বাংলাদেশ অধিনায়কের চোখে ভারতকে হারানোর এটাই সেরা সুযোগ। সংবাদ সম্মেলনে জামাল বলেন, ‘ভারত তাদের সেরা অবস্থায় নেই, তো এবার সেই সুবিধা যদি নিতে পারি... ওদের সুপার লিগ এখনো শুরু হয় নাই। অনেকে অভিযোগ করে, কেন তাদের লিগ চালু হচ্ছে না। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য পজিটিভ। আর যদি খেলার মতো করে বলেন, ভারতে যা হয়েছে। তারা পেশাদার খেলোয়াড়। তাই কঠিন এক ম্যাচ হবে। কোচ যেটা বলেছেন, নেপালের চেয়ে ভারতের বিপক্ষে বেশি সুযোগ পাব আমরা।’
নেপালের কথা মনে করিয়ে খানিকটা হতাশাই ফিরিয়ে আনলেন জামাল। ঘরের মাঠে হামজা-জাদুর পরও সেই ম্যাচে শেষ মুহূর্তের ভুলে ২-২ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ ৷ এমন ভুল কি এই ম্যাচেও হওয়ার শঙ্কা আছে? এমন প্রশ্নে কাবরেরার উত্তর, ‘যদি আমরা তিন পয়েন্ট পেতে চাই, অবশ্যই কাল (আজ) এমন কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না। এসব পরিস্থিতি আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে, সেগুলো থেকে শিখতে হবে, কাজ করতে হবে। কখনো আমরা এসব পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলেছি।’
গত কয়েক ম্যাচে রক্ষণের ভুল ছিল স্পষ্ট। জামালও অকপটে স্বীকার করে নেন তা। তাঁর মতে, নেপালের চেয়ে কিছুটা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলবে ভারত ৷ তখন বাংলাদেশের সুযোগও বেড়ে যাবে। বললেন জামাল, ‘ডিফেন্সে অবশ্যই আমাদের সমস্যা আছে। তবে ভারত যদি অনেক ওপরে উঠে খেলে, তাহলে আমরা সামনে অনেক স্পেস পাব। আক্রমণে যারা খেলবে, ওরা অনেক গতিময় খেলোয়াড়। রাকিব সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগতির খেলোয়াড়। তাঁকে যদি ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি, তাহলে সন্দেশ ও রাহুল যেই থাকুক না কেন, হি উইল কিল দ্য ডিফেন্স।’
ভারত ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনা ছড়িয়ে আছে চারদিকে। কাবরেরাও টের পাচ্ছেন তা। তিনি অবশ্য অতি উচ্ছ্বাসী নন। তবে আবেগের লাগাম টানার পাশাপাশি জয়ের ব্যাপারে দিলেন নিশ্চয়তা। ম্যাচটি তাঁর জন্যও যে বাঁচা-মরার, ‘আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাটাও জরুরি, যেন জিততে পারি। কারণ আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। তাই ভারতের বিপক্ষে অবশেষে জয়ের সুযোগটা নিতে হবে। এটা ঘটবেই। শতভাগ ঘটবে। আর আমরা নিশ্চিত যে সেটা কালই (আজ) ঘটবে।’
জামালও শুধু আবেগ নয়, মস্তিষ্কের পূর্ণ ব্যবহার করতে চান, ‘বছরটা যদি জয় দিয়ে শেষ করতে পারি, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমর্থক ও আপনাদের জন্যও ইতিবাচক হবে। তাই আমার জন্য ম্যাচটি আবেগের, একই সঙ্গে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে খেলতে হবে। কালকের ম্যাচে অনেক ফ্রি কিক হবে, হলুদ কার্ড হবে, গালাগালি হবে। তবে আমি এটা স্বাভাবিক ম্যাচ হিসেবে ধরব। তবে এই ম্যাচের তাৎপর্য আমি জানি।’