আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মিরপুরে আগামীকাল শততম টেস্ট খেলতে নামবেন মুশফিকুর রহিম। ২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে অভিষেক হওয়া বেবি-ফেসের সেই মুশফিক দেখতে দেখতে ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে ২০ বছর পার করে ফেলছেন। গত দুই দশকে যতবার তিনি টেস্ট খেলতে নেমেছেন, প্রত্যেকবারই তাঁর মাথায় দেখা গেছে একই টুপি।
মুশফিকের সেই টুপিটি আর কিছু নয়। ২০০৫ সালে লর্ডসে টেস্টে অভিষেকের সময় মুশফিক সেই টুপি তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। দীর্ঘ এই ২০ বছরে বাংলাদেশের আরও অনেক ক্রিকেটারের টেস্ট অভিষেক হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ব্যাগি গ্রিন টুপির প্রচলন না থাকলেও প্রত্যেকেই একটি করে পেয়েছেন এই টুপি। বেশির ভাগই অবশ্য মাঠে সেই টুপি ব্যবহার করেন না। মুশফিক তো এখানেই ব্যতিক্রম।
এখন পর্যন্ত মুশফিক ২০ বছরের ক্যারিয়ারে ৯৯ টেস্ট খেলছেন। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে প্রত্যেক ম্যাচেই ব্যাগি গ্রিন টুপি পরে খেলার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছেন স্টিভ ওয়াহর কাছ থেকে। ১১ নভেম্বর সিলেটে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরুর আগে সামাজিকমাধ্যমে ব্যাগি গ্রিন টুপি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। ৮ নভেম্বর নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এসএস ব্যাটের ওপরে রাখা একটি ব্যাগি গ্রিন টুপির ছবি পোস্ট করেছিলেন। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিখেছিলেন, ‘সকল উত্থান-পতনের সঙ্গী। ১০০ ম্যাচ খেলার পথে।’ সেই মুশফিক যখন শততম টেস্ট খেলতে নামছেন, তাঁর মাঠে নামার আগে আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ব্যাগি গ্রিন টুপির ছবি পোস্ট করেছে। বিসিবি ক্যাপশনে লিখেছে, ‘বছরের পর বছর প্যাশন নিয়ে এই টুপি পরছেন তিনি। মুশফিকের শততম টেস্টের যাত্রা।’
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিকে আগেই বিদায় বলা মুশফিক এখন শুধু টেস্টই খেলছেন। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে সতীর্থ হিসেবে কত জনকেই তো তিনি পেয়েছেন। তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থেকে শুরু করে তাইজুল ইসলাম, লিটন দাস, তাওহীদ হৃদয়রা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মুশফিক গত রাতে সামাজিক মাধ্যমে ১০ মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘আপনাদের সবার বার্তার জন্য কৃতজ্ঞ।’ সেই ভিডিও বার্তায় মুশফিকের বাবা বলেছেন, ‘তোমার ১০০ তম সেঞ্চুরির ম্যাচ দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি মনে করি, তোমার ত্যাগ, পরিশ্রম, সততা, খেলার প্রতি যে নিবেদন, সৃষ্টিকর্তা তোমাকে অবশ্যই সাফল্যমন্ডিত করবেন। ১০০ তম ম্যাচে সেঞ্চুরিসহ ভালো ইনিংস উপহার দাও, এই কামনা করি।’
মুশফিকের বাবা, মা, স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িও শততম টেস্ট নিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মুশফিকের ছেলে বলেছে, ‘অভিনন্দন বাবা। তুমি আমার সুপার হিরো। শুভকামনা।’ মুশফিকের প্রচার করা ভিডিও বার্তায় মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘মুশফিক আশা করি ভালো আছো। কদিনের মধ্যে শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছো তুমি। এটা তোমার জন্য অনেক বড় এক মাইলফলক। এটা আমাদের সবার জন্যই গর্বের এক বিষয়। বিশেষ করে, আমাদের পরিবার, তোমার ও আমার জন্য। আমি তোমার সঙ্গে অনেক বছর খেলেছি।’ লিটন দাস বলেছেন, ‘হ্যালো মুশফিক ভাই। আপনার এই অর্জনের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন। আমি অনেক ভাগ্যবান যে অনেক দিন ধরে আপনার সঙ্গে মাঠে ও ড্রেসিংরুমে সময় কাটিয়েছি। আপনার এই শততম টেস্ট যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে সব সময়, এই দোয়া করি।’
মুশফিকের গত রাতের ভিডিও বার্তায় তামিম তো অভিনন্দন জানিয়েছেনই। আজ সকালে নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে তামিম লিখেছেন, ‘তোকে নিয়ে বলার আছে অনেক কিছু্ই। সেই ছেলেবেলা থেকে একসঙ্গে খেলছি, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে, বিভিন্ন পর্যায়ে, রুমমেট ছিলাম অনেকবার। কাছ থেকে দেখেছি তোকে। কোনো এক সময় কোন এক উপলক্ষে কোনো প্ল্যাটফর্মে নিশ্চয়ই বলব সবকিছু। তবে আজকের দিনের জন্য শুধু একটিই কথা। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার মাইলফলক তোর চেয়ে বেশি আর কারও প্রাপ্য নয়। কেউ ডিজার্ভ করে না। আশা করি, ভবিষ্যতে এই অর্জনে তোর পাশে নাম লেখাবে আরো অনেকেই। কিন্তু তুই প্রথম, এটা তোরই প্রাপ্য।’
মুশফিকের বগুড়া এলাকা থেকেই উঠে এসেছেন তাওহীদ হৃদয়। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটারের শততম টেস্ট নিয়ে হৃদয় লিখেছেন, ‘১০০তম টেস্ট; এটা শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি আমাদের জন্য গর্বের। যদি কখনো সেই ছোট্ট হৃদয়কে আপনার সামনে দাঁড় করাতে পারতাম, তখন বুঝতেন আপনি তার একমাত্র অনুপ্রেরণার নাম। শুভেচ্ছা এই মহা মাইলফলকের জন্য।আগামী পথ হোক আরও উজ্জ্বল, আরও সফল, আরও অনেক স্মরণীয় ইনিংসের অপেক্ষায় রইলাম।’ বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৩৫১ রান করেছেন মুশফিক। সর্বোচ্চ তিন ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৯ রানের ইনিংসও তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে। শততম টেস্টটা কীভাবে রাঙাতে পারেন, তাতে নিশ্চয়ই চোখ থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
আরও পড়ুন: