আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন পুরোদস্তুর ‘ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’। সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্টে রেকর্ড গড়া এক সেঞ্চুরি করেন তিনি। তাঁর দল এক দিন হাতে রেখেই ইনিংস ও ৪৭ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে। যদিও ব্যাটিংয়ের সময় কখনোই নিজেকে অধিনায়ক মনে করেন না শান্ত।
এক সময় বাংলাদেশের তিন সংস্করণের অধিনায়ক থাকলেও শান্ত এখন টেস্টেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির চেয়ে বরং টেস্টে তিনি সাবলীল ব্যাটিং করেন। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে করেছেন ৮ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটার যেখানে ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়ে থাকেন, শান্ত এক ব্যতিক্রমই বটে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ চার দিনে ম্যাচ জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শান্ত। অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবসময় যেটা বলি ব্যাটিংয়ের সময় ব্যাটার হিসেবে খেলতে পছন্দ করি। একবারের জন্যও মনে হয় না অধিনায়ক হিসেবে খেলছি আমি। চিন্তা করি একজন ব্যাটার হিসেবে কীভাবে অবদান রাখতে পারি। সেটাই প্রধান ফোকাসে থাকে। যখন মাঠের বাইরে বা ফিল্ডিংয়ে থাকি, তখন অধিনায়কের দায়িত্বগুলো পালনের চেষ্টা করি।’
এ বছরের জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শেষে শান্ত টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবর্তে টেস্ট অধিনায়কের বিকল্প ভেবে রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শেষ পর্যন্ত তাঁর কাঁধেই ২০২৫-২৭ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব তুলে দেয় বোর্ড। আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ যেমন সাড়ে চার মাস পর টেস্ট খেলেছে, শান্তর অধিনায়কত্বেও ফেরা এই সময়েই।
অধিনায়কত্ব হারানোর পর শুরুর দিকে সময়টা কঠিন গেলেও পরে দারুণ কেটেছে বলে জানিয়েছেন শান্ত। এ সময় তিনি নিজের স্কিল নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ৪৭ রানে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘সত্যি বলতে প্রথম কিছুদিন কঠিন ছিল। তারপর অনেকটা রিল্যাক্স হয়ে গিয়েছিলাম। উপভোগ করেছি পুরো সময়টা। নিজেকে সময় দিয়েছি। পাশাপাশি পরিবারকেও সময় দিয়েছি। স্কিল বা মানসিক দিক থেকে ক্রিকেটে কীভাবে উন্নতি করা যায়, এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি। সেই সময়টা আমার খুব ভালো কেটেছে।’
২০১৭ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ৩৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৭১ ইনিংস ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন শান্ত। এর মধ্যে ১৩টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন (৮ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটি)। এখনই এত প্রশংসা তাঁর পছন্দ না বলে জানিয়েছেন তিনি। সিলেটে আজ চতুর্থ দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘মাত্র ৩৮ টেস্ট খেলেছি। এখনই বেশি দূর ভাবছি না। এত ভালো ভালো কথা শোনার অভ্যাস নেই।মুশফিক ভাই ৯৯ টেস্ট খেলে ফেলেছেন। সেরকম ১০০-১৫০ ম্যাচ খেলে যদি ধারাবাহিক থাকতে পারি, তখন বলা যাবে যে ভালোভাবে ক্যারিয়ার শেষ করতে পেরেছি।’
১৭১ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। শান্ত করেছেন ১১৪ বলে ১০০ রান। বাংলাদেশের ৫৮৭ রানের ইনিংসে এই দুই ব্যাটারই সেঞ্চুরি করেছেন। টেস্টে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে যৌথভাবে সর্বোচ্চ চারটি করে সেঞ্চুরির কীর্তি এখন মুশফিকুর রহিম ও শান্তর। ১৯ নভেম্বর মিরপুরে শুরু হবে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। মিরপুরেই টেস্ট ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ খেলতে নামবেন মুশফিক।