পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত মেরি কুরি। তিনি তেজস্ক্রিয় ধাতু পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিষ্কার করেন। উচ্চমাত্রার এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে কুরি অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পদার্থগুলো এতটাই তেজস্ক্রিয় যে মেরি কুরির ব্যবহৃত জিনিস আরও দেড় হাজার বছর তেজস্ক্রিয় থাকবে।
কুরিই প্রথম ও একমাত্র নারী যিনি দুটি ভিন্ন বিভাগে (পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন) নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ১৮৯৬ সালে ইউরেনিয়াম আবিষ্কারের মাধ্যমে এই গবেষণা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যান ফরাসি পদার্থবিদ হেনরি বেকরেল।
মেরি কুরি তাঁর ফরাসি পদার্থবিদ স্বামী পিয়েরে কুরির সঙ্গে মিলে ১৮৯৮ সালে আরও একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিষ্কার করেন। এ বিজ্ঞানী জুটি নতুন তেজস্ক্রিয় পদার্থের নাম দেন—পোলোনিয়াম। মেরির দেশ পোল্যান্ডের নামানুসারে এই নাম রাখা হয়।
শর্ট হিস্টোরি অব নিয়ারলি এভরিথিং বইয়ের লেখক বিল ব্রাইসন বলেন, কুরির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন–জামাকাপড়, আসবাব, রান্নার বইপত্র ও গবেষণাগারের নোটগুলোর বয়স ১০০ বছরের বেশি। এগুলো এখনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে।
ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর অনুসারে, গ্রন্থাগারের দর্শনার্থীদের কুরির পাণ্ডুলিপি দেখার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর অনুসারে, এই পাণ্ডুলিপি দেখার জন্য দর্শনার্থীদের একটি দায়মুক্তি মুচলেকাতে সই করতে হয় ও প্রতিরক্ষামূলক জামা পরতে হয়। কারণ, এসব জিনিস রেডিয়াম ২২৬ তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ দিয়ে দূষিত। আর রেডিয়ামের অর্ধায়ু ১ হাজার ৬০০ বছর। অর্থাৎ রেডিয়ামের মোট পরমাণুর ঠিক অর্ধেক পরিমাণ ক্ষয় হতে ১ হাজার ৬০০ বছর লাগবে। তাই মেরি কুরির ব্যবহৃত জিনিস থেকে এখনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে।
কুরি দম্পতিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্যানথিওনে সমাহিত করা হয়েছে। এখানে ফ্রান্সের বিশিষ্ট নাগরিকেরা শায়িত রয়েছেন। যেমন—ফরাসি দার্শনিক রুশো এবং ভলতেয়ারের সমাধিও এখানে।
কুরির সময়ের চেয়ে এখনকার যুগে তেজস্ক্রিয় পদার্থ সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যায়। চিকিৎসা ও পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ছাড়াও তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো ফল ও শাকসবজিকে জীবাণুমুক্ত করতে, ঢালাই পরীক্ষার জন্য এবং জীবাশ্মের বয়স গণনা করতে ব্যবহার করা হয়।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স