হোম > বিজ্ঞান

সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল তারকায় ভরা মহাকাশ, তবু এত অন্ধকার কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

আমরা দেখতে পারি এমন মহাবিশ্বে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন তারকা রয়েছে। ছবি: নাসা

রাতের আকাশের দিকে তাকালে অসংখ্য তারকা জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়। আবার মহাবিশ্বের লাখ লাখ গ্যালাক্সিতে এমনকি সূর্যের চেয়ে বড় ও উজ্জ্বল কোটি কোটি তারকা রয়েছে। তাই এমন প্রশ্ন স্বাভাবিক, এত তারকা থাকা সত্ত্বেও মহাকাশ এত অন্ধকার কেন। মহাকাশ তো উজ্জ্বল হওয়ার কথা। এই পুরোনো ও চমকপ্রদ প্রশ্নটিরই নাম ‘ওলবার্সের প্যারাডক্স’। জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেনরিখ ওলবার্স ১৮২৩ সালে প্রশ্নটি জনপ্রিয় করেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, এমন মহাবিশ্বে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন তারকা রয়েছে। অনেক তারকার উজ্জ্বলতা আমাদের সূর্যের চেয়ে বেশি। তাহলে আকাশ আলোয় ভরে যাওয়ার কথা, তবে বাস্তবে তা হয় না।

ধরা যাক, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল বেলুনের মধ্যে আমরা আছি। যদি এই বেলুন ১০ আলোকবর্ষ প্রশস্ত হয়, তাহলে এতে হয়তো এক ডজন তারকা থাকবে। দূরের তারকাদের খুব ম্লান দেখাবে। তবে যত বড় হবে বেলুন, ততই বাড়বে তারকার সংখ্যা। ১ হাজার, ১০ লাখ, ১০০ কোটি আলোকবর্ষ—যত দূরে তাকানো যাবে, তত বেশি তারকা দেখার কথা। প্রতিটি তারকা একটু করে আলো দেবে, আর সব মিলিয়ে পুরো আকাশই উজ্জ্বল হয়ে যাওয়ার কথা। তবে বাস্তবে তা হচ্ছে না।

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফিরতে হবে মহাবিশ্বের বয়সের দিকে। মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর। এত বছর আগে সৃষ্টির পরও ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষের বেশি দূরের তারকাগুলোর আলো এখনো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে পারেনি। সুতরাং বাস্তবের ‘আলোক-বেলুন’টি সীমিত—১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত।

এই সীমিত অঞ্চলের মধ্যে যত তারকা আছে, সেগুলো মহাকাশের কিছু অংশ আলোকিত করলেও সবদিকে আলো ছড়ানোর মতো যথেষ্ট তারকার আলো এখনো পৃথিবীতে পৌঁছায়নি। তাই কোনো দিকে তাকালে তারকা দেখা যায়, আবার কোনো দিকে তাকালে কিছুই দেখা যায় না—শুধু অন্ধকার। ফলে আকাশের অনেক অংশ অন্ধকার; কারণ, সেসব দিক থেকে এখনো আলো আসেনি।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কি রাতের আকাশ একসময় পুরোপুরি আলোকিত হয়ে উঠবে? আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আরেকটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হয়। তা হলো—মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ।

বিশ্বের সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সিগুলো প্রায় আলোর গতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সরে যাওয়ার ফলে তারকাদের আলো ডপলার শিফট নামক একটি প্রভাবে এমন তরঙ্গে পরিণত হয়, যেটি মানুষের দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়—যেমন ইনফ্রারেড বা মাইক্রোওয়েভ।

অর্থাৎ, আলো সময়মতো পৌঁছালেও সেটিকে আমরা দেখতে পারি না। এ ছাড়া মহাবিশ্বে ধূলিকণা ও গ্যাসীয় মেঘের উপস্থিতিও অনেক দূরের আলোকে শোষণ করে ফেলে। ফলে সেই আলো পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না।

এমন এক সময় আসবে, যখন সব তারকার জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে যাবে। সূর্যের মতো তারকা টিকে থাকে প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হাজার ট্রিলিয়ন বছর পরে মহাবিশ্ব একেবারে অন্ধকার হয়ে যাবে। তখন শুধু থাকবে শ্বেতবামন, কৃষ্ণগহ্বর আর মৃত তারকার অবশেষ।

তথ্যসূত্র: ডিসকভার ম্যাগাজিন

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

ফ্রান্সে সমুদ্রতলে কিংবদন্তির শহর, ৭০০০ বছর আগের বিশাল প্রাচীরের সন্ধান

পূর্বের ধারণারও সাড়ে ৩ লাখ বছর আগে মানুষের আগুন জ্বালানোর প্রমাণ মিলল

২০০ শিশুর জন্মের পর জানা গেল দাতার শুক্রাণুতে ছিল ক্যানসারের জিন

মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্তের দাবি

কৈশোর থামে বত্রিশে, বার্ধক্যের শুরু ছেষট্টির পর—চিহ্নিত হলো মস্তিষ্কের ৫ পর্যায়

ভূমিকম্পের পর্যায়ক্রম: ফোরশক, মেইনশক ও আফটারশক কী