হোম > বিজ্ঞান

উন্মোচন হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় মানচিত্র, রয়েছে ১৩ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

মানচিত্রটি আমাদের মহাবিশ্বের গঠন নিয়ে প্রচলিত ধারণায় বড় পরিবর্তন আনছে। ছবি: কমসস ওয়েব কোলাবরেশন

নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের (জেডব্লিউএসটি) মাধ্যমে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় মানচিত্র তৈরি করলেন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই মানচিত্রটি মহাবিশ্বের একটি ছোট অংশজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে প্রায় আট লাখ গ্যালাক্সি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে এমন গ্যালাক্সিও আছে, যা এত দূরে অবস্থিত যে সেগুলো মহাবিশ্বের শৈশবের সময়কার, অর্থাৎ প্রায় ১৩ বিলয়ন বছর আগে যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই দেখা যাচ্ছে।

৫ জুন (বৃহস্পতিবার) মানচিত্রটি তৈরি উন্মোচন করা হয়। এই মাত্রচিত্র তৈরি করেছেন কসমিক ইভল্যুশন সার্ভে (কসমস) প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা। মানচিত্রটি আকাশের দশমিক ৫৪ বর্গ ডিগ্রি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত, যা চাঁদকে পৃথিবী থেকে দেখলে যতটা জায়গা নেয়, তার প্রায় তিন গুণ।

এই বিশাল মানচিত্রের ডেটা সংগ্রহ করতে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ টানা ২৫৫ ঘণ্টা ধরে একটি নির্দিষ্ট মহাশূন্য অঞ্চল—‘কসমস ফিল্ড’ পর্যবেক্ষণ করে। এই অঞ্চলে খুব কমসংখ্যক নক্ষত্র, গ্যাসীয় মেঘ বা অন্যান্য বস্তু আছে, যা আমাদের মহাবিশ্বের গভীর অতীত দেখায় বাধা দিতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করে এ অঞ্চলের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে।

জেডব্লিউএসটির এই পর্যবেক্ষণের ফলে আমরা মহাবিশ্বের এক অত্যন্ত বিশদ চিত্র পেয়েছি, যা প্রায় ১ হাজার ৩৫০ কোটি বছর পর্যন্ত পেছনে ফিরে যায়।

মহাবিশ্ব যেহেতু ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাই দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে যেসব দৃশ্যমান আলো বের হয়, তা আমাদের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রসারিত হয়ে ইনফ্রারেড আলোতে রূপান্তরিত হয়। এ কারণেই অত্যন্ত সংবেদনশীল ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ হিসেবে জেডব্লিউএসটি তৈরি করা হয়েছে। তাই এর মাধ্যমে এই দূর অতীত থেকে আসা ক্ষীণ, প্রসারিত সংকেতগুলো শনাক্ত বরা সম্ভব হয়, যা আগের টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যেত না। ইতিমধ্যেই এটি আমাদের মহাবিশ্বের গঠন নিয়ে প্রচলিত ধারণায় বড় পরিবর্তন আনছে।

কসমস প্রকল্পের অন্যতম প্রধান গবেষক এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারার পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যাটলিন কেসি বলেন, ‘টেলিস্কোপটি চালু হওয়ার পর থেকেই আমরা ভাবছিলাম, এই টেলিস্কোপের ডেটাগুলো আমাদের প্রচলিত মহাজাগতিক মডেল ভেঙে দিচ্ছে কি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিস্ময় হচ্ছে—জেডব্লিউএসটি দিয়ে আমরা এই অবিশ্বাস্য দূরত্বে প্রত্যাশার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছায়াপথ দেখতে পাচ্ছি। এমনকি এমন সব সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলও ধরা পড়ছে, যেগুলো হাবল টেলিস্কোপে একেবারেই দেখা যেত না।’

জেডব্লিউএসটির কসমস ফিল্ড পর্যবেক্ষণের যে ডেটা ছিল, তা পর্যবেক্ষণের পরপরই প্রকাশ করা হয়। তবে এই ডেটা সহজে বিশ্লেষণযোগ্য ছিল না। কারণ, এ ধরনের ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে বিশেষ প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়।

মহাবিশ্বের ইতিহাস জানার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এই উদ্যোগ। এখন অপেক্ষা—এই বিশাল মানচিত্র থেকে আরও কত অজানা রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বেরোচ্ছে সোনা—২০২৫ সালে আরও যা জানা গেল

ভারতের প্রথম জিনগতভাবে পরিবর্তিত ভেড়া এক বছরে পা দিল, কেমন আছে সে

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

ফ্রান্সে সমুদ্রতলে কিংবদন্তির শহর, ৭০০০ বছর আগের বিশাল প্রাচীরের সন্ধান

পূর্বের ধারণারও সাড়ে ৩ লাখ বছর আগে মানুষের আগুন জ্বালানোর প্রমাণ মিলল

২০০ শিশুর জন্মের পর জানা গেল দাতার শুক্রাণুতে ছিল ক্যানসারের জিন

মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্তের দাবি