হোম > পথের কথা

‘কষ্ট তো বেদনায় ভরপুর’

জাহীদ রেজা নূর

আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল কোপা আমেরিকা ফাইনাল শেষ হওয়ার পর মেসির হাতে কাপ উঠতেই বেরিয়ে পড়ি। রাস্তায় উল্লাস দেখা যায় কিনা, সেটাই ছিল বের হওয়ার উদ্দেশ্য।

কিন্তু সে রকম কিছু দেখা গেল না। শুধু রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পাশের গলিতে বসা বাজারে কেনাবেচায় ব্যস্ত মানুষদের দেখলাম। এরই মধ্যে দেখলাম, আর্জেন্টিনার জার্সি পরা একজন দৌড়ে যাচ্ছেন সামনে। কী হয়েছে, সেটা বুঝিয়ে দিলেন একজন মাছবিক্রেতা। ‘এইমাত্র ছেলেটার পকেটমার হয়েছে। চোর ধরার জন্য ছুটছে ও।’

রাস্তার দুপাশে জমে ওঠা বাজার থেকে বের হয়ে সলিমুল্লাহ রোডের দিকে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে চার তরুণ। আড্ডা মারছে তারা। ভেসে ভেসে যে কথাগুলো কান পর্যন্ত পৌঁছায়, তাতে বোঝা যায় এ পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে নিয়ে কথা হচ্ছে। ওদের সামনে থামলে ওদের মধ্যে ঔৎসুক্য দেখা দেয়।

আমি চারজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ওরা ঝটপট রাজি হয়ে যায়। শুরুতেই নাম জেনে নিই।

সজীব। বকর। আদিব। মো. সাগর।

আপনারা খেলা দেখেছেন?
‘হ্যাঁ, খেলা তো দেখেছি।’
আমার পরের প্রশ্নের আগেই মো. সাগর জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কোন দল সাপোর্ট করেন?
আর্জেন্টিনা।
‘তাহলে তো আপনাকে ইন্টারভিউ দিব না। আমরা চারজনই ব্রাজিলের সাপোর্টার।’
‘তাতে কী হলো? আমিও তো নেইমারের জন্য দুঃখ পেয়েছি। নেইমারের কান্না দেখে আমারও তো খারাপ লেগেছে।’
আমার এই স্বীকারোক্তির ফলে সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমোদন পেয়ে যাই।
‘খেলাটা কেমন হলো?’
‘ফিফটি ফিফটি হইসে।’ এইবার বলল আদিব। এর পর থেকে প্রায় সব প্রশ্নের উত্তরই চারজনের হয়ে আদিব দিয়েছে। বাকিরা শুধু সায় দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়েছে।
‘ব্রাজিলের খেলা কেমন লাগল?’
‘চান্স মিস হইসে ব্রাজিলের অনেক। চান্স মিস না করলে খেলার রেজাল্ট অন্যরকম হইতো।’
‘যখন ব্রাজিল গোল করতে পারছিল না আপনাদের কি কষ্ট হচ্ছিল খুব?’
‘কষ্ট তো বেদনায় ভরপুর।’ বললেন আদিব।
‘ফুটবলটা যে লাতিন দেশ থেকে ইউরোপে চলে গেল সেটা কি বুঝতে পারেন? ইউরোপের যে গতি আর স্পিরিট, সেটা লাতিন ফুটবলে এখন দেখা যায় কম। আপনারা কি একমত?’
‘হ্যাঁ, সেটা ঠিক। লাতিনে শুধু দুইটাই জায়ান্ট। আর নাই।’
‘বাণিজ্য টাকা–পয়সার একটা ব্যাপার আছে মনে হয়, নাকি?’
‘লাতিনরা এখন প্লেয়ার বের করতে পারছে না।’
‘আমাদের দেশে যেমন ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা, আর কোনো দলের বেশি সমর্থন নেই। পৃথিবীর আর কোথাও কি আছে এমন? আপনাদের কী মনে হয়? একসময় দেশে মোহামেডান–আবাহনী নিয়ে এ রকম ছিল।’
‘এখন স্পেন, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়াও উঠে এসেছে। ওদের কথাও ভাবি।’

এ সময় মোটরসাইকেলে দুজন মানুষ এসে দাঁড়ালেন পাশে। তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিলেন ড্রাগন ফল বিক্রেতা।
‘মামা, এই দ্যাহেন। দুইজন হোন্ডায়। একজন ব্রাজিল একজন আর্জেন্টিনা।’

কথা বলার জন্য তাঁরা মোটরসাইকেল একটু দাঁড় করালেন। কিন্তু পরে ভেবে দেখলেন, এই চতুষ্টয়ের সঙ্গে কথা শেষ হওয়ার আগে তাদের সঙ্গে কথা হবে না। তাই চলে গেলেন। হয়তো তাড়া ছিল।

আবার কথা শুরু হলো।
‘ইতালির খেলা হলে দেখেন? কিংবা ইংল্যান্ড? নাকি শুধু ব্রাজিলের খেলাই দেখেন?’
‘আমাদের পার্সোনাল ফেবারিট হলো ব্রাজিল। ইতালির খেলা হলে হয়তো সাপোর্ট করব, কিন্তু ব্রাজিল তো ব্রাজিলই।’
‘পড়াশোনা?’
‘আমি মোহাম্মদপুর গভর্নমেন্ট বয়েজে। এসএসসি দেব।’ বললেন সজীব।
‘আমি পড়ি ফিরোজা বাশার আইডিয়াল কলেজে, আমিও এসএসসি দেব।’ বললেন আদিব।
‘মোহাম্মদপুর গভর্নমেন্টের আমি।’ এটা মো. সাগরের উত্তর।
আর সবচেয়ে ছোটখাটো যিনি, সেই বকর বললেন, ‘আমি গভর্নমেন্ট বাংলা কলেজের, ফার্স্ট ইয়ার।’
‘এমনি সময় কী করেন আপনারা? অবসরে?’
‘এমনি সময় আমরা ফুটবল খেলি।’
‘খেলেন কোন মাঠে?’
‘এই মাঠে’—বলে ওরা দেখিয়ে দিলেন সামনের ঈদগাহ মাঠ।

এবার ওরা মো. সাগরকে দেখিয়ে বলেন, ‘ও কিন্তু খুব ভালো খেলে। আবাহনীতে প্র্যাক্টিস করে।’
মো, সাগর একটু লজ্জা পান। কিন্তু চোখে মুখে গর্বের খানিক আভাও দেখা যায়।
অন্যদের জিজ্ঞেস করি, ‘তোমরা আবাহনীতে প্র্যাকটিস কর না কেন?’
‘আমরা আমাদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে ব্যস্ত। সময় দিতে পারি না।’
এবার ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘আজকের দিনটা কীভাবে কাটবে?’
‘এই কেটে যাবে।’ হাসতে হাসতেই জবাব দেন আদিব।
‘মেসিকে একটা…’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, অ্যাপ্রিশিয়েট করি। মেসির একটা কাপ পাওয়া দরকার ছিল।’
শেষ কথাটা বলেন বকর, ‘আজ দিনটা ভালো কাটবে না। আর্জেন্টিনার বন্ধুরা পঁচাবে।’

চুম্বকে চলছে শেফালীর জীবিকা

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: কেমন আছেন খেটে খাওয়া মানুষ

দার্জিলিংয়ের সেই গোমড়ামুখো চালক

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’

 ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’

বরই বেচে ভাত জোটে না দেলোয়ারের

দুর্গম পাহাড়ি পথে ভরসা বাবুল বড়ুয়া

টিয়া পাখির বাচ্চার প্রাণ বাঁচানো লিয়নকে বাঁচাবে কে

দুই কিডনিই বিকল, মেয়েকে বাঁচাতে প্রবাসী কর্মী মা এখন অটোরিকশা চালক

সত্তরোর্ধ্ব হাসেমের কাঁধে দিনভর আইসক্রিমের বাক্স, তবুও বুড়ো-বুড়ির সংসারে টানাটানি