তখন ভোর ৬টা। সাইকেল নিয়ে ঘাটাইল কলেজ রোডে উঠে এলেন সিরাজুল ইসলাম (৪৫)। দুই হাতে ধরে আছেন হরেক রকম তৈজসপত্রে ঠাসা একটি বাইসাইকেল। তাঁকে অনুসরণ করে আরও পাঁচ যুবক একইভাবে সড়কে উঠে এলেন। তাঁরা কলেজের সামনে একটা খুপরিতে থাকেন। সাইকেলে হরেক রকম জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করাই তাঁদের পেশা।
সিরাজুল ইসলামের মতো দুই শতাধিক ব্যক্তি ঘাটাইলে আছেন, যাঁদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। তাঁরা ঘাটাইলের প্রত্যন্ত এলাকায় সাইকেল নিয়ে ব্যবসা করেন। গ্রামেগঞ্জে তাঁরা ‘সাইকেল ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত।
তাঁদের সাইকেলে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের সামগ্রী, শিশুদের খেলনা বিশেষ কৌশলে সাজানো থাকে। প্রতিদিন ভোরবেলায় তাঁরা বের হন এবং সন্ধ্যার আগে ফিরে আসেন। গ্রামের নারী ও শিশুরা তাঁদের গ্রাহক। তাঁদের দোকানে দুই টাকা থেকে শুরু করে দেড় শ টাকার মালামালও পাওয়া যায়।
ফেরিওয়ালা শফিকুল ইসলাম (২৮) জানান, অল্প পুঁজিতে এই ব্যবসা করা যায়। এমনকি মহাজনের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়ে এই ব্যবসা করা যায়। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকে। খরচ বাদে প্রতি মাসে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয়।
সাইকেল ফেরিওয়ালাদের একজন সুমন মিয়া (৩৮)। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি এই পেশায় জড়িত। ঘাটাইলে ব্যবসা করছেন ১০ বছর ধরে। তিনি জানান, এই ব্যবসার আয় দিয়েই তাঁর সংসার চলে। আগে গ্রামে গ্রামে ফেরি করলেও এখন তিনি মহাজন হয়েছেন। তাঁর অধীনে ১৫ জন ফেরিওয়ালা আছেন। সুমন ঢাকা থেকে পণ্য এনে ফেরিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করেন। ঘাটাইল উপজেলা সদরে তাঁর মতো আরও ১১ জন মহাজন রয়েছেন।
ফেরিওয়ালা রাজন আহমেদ বলেন, ১০ থেকে ২০ জন মিলে অল্প টাকায় ঘরভাড়া নিয়ে তাঁরা বসবাস করেন। রাতেই পণ্য দিয়ে সাইকেল সাজিয়ে রাখেন। সকাল ও রাতের খাবার তাঁরা বাসায় খান। দুপুরে গ্রামের হোটেলে খেয়ে নেন। ভোর ৬টার মধ্যে সকালের খাবার খেয়ে সাইকেল নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই তাঁরা ঘরে ফেরেন।
উপজেলার কুশারিয়া গ্রামের গৃহবধূ শেফালি বেগম বলেন, সংসারের ছোটখাটো জিনিসগুলো এখন ঘরে বসে কিনতে পারছি। প্রায় প্রতিদিনই ফেরিওয়ালারা আসে। এসব দোকানের পণ্যের মান যেমন সন্তোষজনক, তেমনি দামও সস্তা বলে জানান তিনি।
বাড়ি থেকে এত দূরে এসে ব্যবসা করতে কোনো সমস্যা হয় কি না, জানতে চাইলে ফেরিওয়ালা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে ঘাটাইলে ব্যবসা করছি। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই। বরং বাইরের লোক হিসেবে এখানকার লোকজন আমাদের বেশ আদর করে থাকেন।’