সকালের সূর্যের হালকা রক্তিম বৃত্তটি মিলিয়ে যাওয়ার আগেই লাল শালুতে ঢাকা হালুয়া রুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মো. কামরুল। বয়সের চাকা ১৮ না পেরোলেও চার চাকার ঠেলা গাড়িতে চলে বাণিজ্য। পরিবারের উপার্জনে ভূমিকা রাখতে কামরুলের এই পথচলা।
কামরুল থাকে নরসিংদীর মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়; মহাজনের ভাড়া বাসায়। লোহার চার চাকার ওপরে একটি টেবিলই তার দোকান। এ দোকানের পণ্য ঢাউস সাইজের ময়দার রুটি ও হালুয়া। রক্তিম ভোরে লাল শালুতে ঢাকা হালুয়া রুটির নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পথে; গ্রামের পর গ্রামে ফেরি করে চলে বিক্রি। মঙ্গলবার মনোহরদীর হাররদীয়া গ্রামের পথে কামরুলের দেখা মেলে; পথেই জমে আলাপ।
কামরুলের ভাষায়, সে 'ছেঁড়া রুটি' বিক্রি করে। রুটিগুলো খুব বড় আকারের হওয়ায় ছিঁড়ে টুকরো করে বিক্রি করে বলে এই নাম। এই রুটি কিনলে হালুয়া ফ্রি। ঘণ্টা তিনেক ফেরি করে ১৮টি রুটি বিক্রি করলে ৯০০ টাকা উপার্জন হয়। এ থেকে ৩০০ টাকা তার মজুরি, বাকি ৬০০ টাকা মহাজনের।
কামরুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। অনটনের সংসারে তার জীবনে স্কুলে যাওয়া হয়নি, শৈশব পেরোনোর আগেই ধরতে হয়েছে আয়ের পথ। আগে ঢাকার এক হোটেলে কাজ করত; ছেঁড়া রুটি-হালুয়ার ব্যবসায় নেমেছে মাস দেড়েক হলো। এখন পথই তার আয়ের উৎস।
বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদে পুড়ে তার কচি মুখ হয় লাল। পথচারীর মুখে ওঠে সুস্বাদু ছেঁড়া রুটি হালুয়া। তবে নিজের ভাগ্যে জোটে মোটা চালের ভাত। এই বয়সে পড়াশোনা না করে কি এই কাজ করার কথা ছিল কৈশোর ছুঁই ছুঁই কামরুলের?