হোম > পথের কথা

‘বাহি বেচি না, কেউ মন খারাপ হরলে মোর কী?’

ইমরান খান

জাহিদুল ইসলাম। বয়সে ১১ বছরের শিশু হলেও প্রায় দেড় বছরের অভিজ্ঞতায় সে এখন পুরাদস্তুর ব্যবসায়ী। করোনার শুরুতে মাত্র ৫০ টাকা মূলধনে যাত্রা শুরু। চকলেট, আঁচার বিক্রির মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া সে যাত্রায় এখন বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে অন্তত ২ হাজার টাকা। ঈদের দিন সমবয়সীরা আনন্দ-ভ্রমণ করলেও জাহিদের ব্যস্ত দিন কেটেছে এই ৩ ফুট বনাম ৪ ফুটের দোকানে। এই সমবয়সীরাই ছিল তার মূল ক্রেতা। ঘুরতে পারেনি বলে আক্ষেপ নেই, এই দিনে ৫০০ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পেরেই সে মহা তুষ্ট।

বাড়ির পাশের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র জাহিদ। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে সে বাড়ির সামনে লাঠি পুঁতে, কলা পাতার ছাউনি দিয়ে ঘর বানিয়ে দোকান শুরু করে। পরে বিক্রি জমে উঠলে দোকানের আকার কিছুটা বড় করে। ছাউনিতে কলাপাতার বদলে ওঠে পলি-ইথিলিনের কাগজ, তিন পাশে সিমেন্টের বস্তার বেড়া। নিজের বসার জন্য তার দোকানে রয়েছে একটি ভাঙা চেয়ার, টাকা রাখার জন্য একটি প্লাস্টিকের বক্স। প্রতিদিন সকালে দোকান শুরু করে জাহিদ। কাউকে দোকানে বসিয়ে রেখে ঘরে গিয়ে সেরে আসে দুপুরের খাবার। রাতে দোকান চালানোর জন্য জাহিদের মা প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটি চার্জার লাইট দিয়ে যান। অন্ধকার রাস্তায় এই লাইটের আলোতে মোটামুটি রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি করে বাসায় ফেরে জাহিদ। যাওয়ার সময় জিনিসপত্রও ব্যাগে করে ঘরে নিয়ে যায়।

প্রায় দেড় বছরে জাহিদের দোকানে পণ্যের সমাহারও বেড়েছে। এলাকার একটি বাজার থেকে কেনা তিনটি পণ্য দিয়ে তার বিক্রি শুরু হয়েছিল। এখন তার দোকানে পাওয়া যায় চিপস, বিস্কুট, রুটি, ডাল ভাজা, কয়েক পদের চকলেট ও সিগারেট। এ দোকানের সর্বশেষ সংযোজন শীতল পানীয়। পানীয় ঠান্ডা রাখার জন্য রেফ্রিজারেটর নেই। তবে ভবিষ্যতে ব্যবসা বাড়ানো, ফ্রিজ কেনা, দোকানঘর দালান করার পরিকল্পনাও আছে তার।

‘ক্রয়মূল্য যত কম, লাভ তত বেশি’—এই অর্থনীতি ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছে শিশুবিক্রেতা জাহিদ। তাই তো এলাকার বাজার বাদ দিয়ে দোকানের জন্য পণ্য আনছেন ৫ কিলোমিটার দূরের পেয়ারপুর বাজার থেকে। তার ভাষায়, ‘আগে হাটখালাদ্যা (হাটখোলা) মাল আনতাম। এহন আনি পেয়ারপুইরদ্যা। পেয়ারপুর মালের দাম এট্টু কোম (কম)।’

জাহিদের পরিবার খুব সচ্ছল না হলেও দোকানের বিক্রি থেকে আসা টাকা বাসায় দিতে হয় না। তবে কোনো খাবার খেতে ইচ্ছে করলেও সে খায় না। কারণ, ‘মায় খাইতে মানা হরছে। কইছে, নিজে খাইয়া থুইলে ব্যবসা বাড়বে না।’ ‘বাকির নাম ফাঁকি’ বুঝে যাওয়া জাহিদের দোকানে কোনো বাকি বিক্রি নেই। তবে কেউ যে বাকি চায় না, এমনও নয়। এ বিষয়ে জাহিদের স্পষ্ট বক্তব্য—‘কেউ বাহিতে (বাকিতে) কিছু চাইলে সোজা কইয়া দি–বাহি বেচি না। এতে কেউ মন খারাপ হরলে (করলে) মোর কী?’

চুম্বকে চলছে শেফালীর জীবিকা

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: কেমন আছেন খেটে খাওয়া মানুষ

দার্জিলিংয়ের সেই গোমড়ামুখো চালক

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’

 ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’

বরই বেচে ভাত জোটে না দেলোয়ারের

দুর্গম পাহাড়ি পথে ভরসা বাবুল বড়ুয়া

টিয়া পাখির বাচ্চার প্রাণ বাঁচানো লিয়নকে বাঁচাবে কে

দুই কিডনিই বিকল, মেয়েকে বাঁচাতে প্রবাসী কর্মী মা এখন অটোরিকশা চালক

সত্তরোর্ধ্ব হাসেমের কাঁধে দিনভর আইসক্রিমের বাক্স, তবুও বুড়ো-বুড়ির সংসারে টানাটানি