হোম > পথের কথা

হাজারো চাবি বানানো শামসুল পাননি ভাগ্যের দরজার চাবি

মো. আতাউর রহমান, জয়পুরহাট

কত নষ্ট তালাকেই তো ঠিক করলেন। কত রুদ্ধ দরজা খুলে গেল তাঁর দক্ষতার গুণে। অথচ নিজের ভাগ্যের দরজাটি আজও খোলা হলো না। তালা-চাবি মেরামত করে ৫৫ বছরের জীবন কাটিয়ে দেওয়া শামসুল ইসলামের হাতে আজও আসেনি সেই ভাগ্যের দরজার চাবিটি।

দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে বিভিন্ন কাজ ও পেশায় নিযুক্ত থাকতে হয়। ব্যক্তি এবং পেশার ভিন্নতার কারণে আয়-রোজগারেও তারতম্য দেখা যায়। তারপরও যে যার মতো করে নিজের পেশা ও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। চালিয়ে নিচ্ছেন নিজ নিজ সংসার। শামসুল ইসলামও তালা-চাবির মেরামত করে সংসার ঠিকই চালাচ্ছেন, কিন্তু তা ধুঁকে ধুঁকে।

শামসুল ইসলামের বয়স ৫৫ বছর। চল্লিশ বছর ধরে তালা-চাবি মেরামতের উপার্জন দিয়েই চলছে তাঁর সংসার। আগে ভালোভাবেই দিন চলত। এখন বয়স বেড়েছে। সংসারের খরচ বেড়েছে। বিপরীতের কমেছে উপার্জন। 

শামসুল ইসলামের বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামে। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। বড় ছেলে বেকার। মাঝেমধ্যে অন্যের বাড়িতে মজুরি করেন। ছোট ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তালা-চাবি মেরামতের টাকা দিয়েই চলে তাদের ভরণপোষণ। বয়স্ক মানুষটির চোখে এখন কত কিছুই না ভাসে। কথা বললেই আগের সেই আয়-উপার্জনের কথা শুরু করেন। বর্তমান দুর্দশায় দাঁড়িয়ে বারবারই সেই ‘ভালো থাকার’ সময়টিই মাথায় আসে তাঁর।

শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চল্লিশ বছর ধরে তালা-চাবি মেরামতের কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তালাচাবি নষ্ট হলে মেরামত করে দিই। বিনিময়ে যে টাকা রোজগার হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। আগে সংসার ছোট ছিল। রোজগার হতো বেশি। এখন বয়স বেড়েছে। রোজগার কমে গেছে। কিন্তু সংসারের খরচ বেড়েছে। তাই এখন যে রোজগার হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।’

বয়সের কারণে এখন আর প্রতি দিন কাজে বের হতে পারেন না। শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমি জয়পুরহাট সদর উপজেলার নতুনহাট, জামালগঞ্জ ও ভাদসা হাটবাজারে তিন দিন কাজ করতে পারি। প্রতি হাটে ১০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি রোজগার করতে পারি না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি। সামান্য রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। শেষ বয়সে ঋণের কিস্তির চাপে পড়ে জীবন বিষিয়ে উঠেছে। এভাবেই বেঁচে আছি আমরা।’

কত চাবি বানিয়েছেন তিনি। খুলে দিয়েছেন কত তালা। শুধু তালাচাবি কেন, সমাজের একজন মানুষ হিসেবে মানুষের পাশেই থেকেছেন। সেই সময়ের প্রসঙ্গ টেনে শামসুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ জীবনে হাজারও মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু নিজের সংসার জীবনের যে সংকট, যে সমস্যা, তার সমাধান করতে পারলাম না। সংসারে এখন অভাব অনটন লেগেই থাকে। এ বয়সে এসে আমি অন্য কোনো কাজও ভালোভাবে করতে পারি না। মনও সায় দেয় না। জীবনের ঘণ্টা বেজে উঠলে মরণেই হয়তো হবে এ কষ্টের সমাধান।’

চুম্বকে চলছে শেফালীর জীবিকা

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: কেমন আছেন খেটে খাওয়া মানুষ

দার্জিলিংয়ের সেই গোমড়ামুখো চালক

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’

 ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’

বরই বেচে ভাত জোটে না দেলোয়ারের

দুর্গম পাহাড়ি পথে ভরসা বাবুল বড়ুয়া

টিয়া পাখির বাচ্চার প্রাণ বাঁচানো লিয়নকে বাঁচাবে কে

দুই কিডনিই বিকল, মেয়েকে বাঁচাতে প্রবাসী কর্মী মা এখন অটোরিকশা চালক

সত্তরোর্ধ্ব হাসেমের কাঁধে দিনভর আইসক্রিমের বাক্স, তবুও বুড়ো-বুড়ির সংসারে টানাটানি