জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে এবং দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেবে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপি কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কথা জানান।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ও বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে জামায়াতসহ সমমনা আট দলের সঙ্গে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামীকাল সোমবার চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি যে, আমরা আসন্ন এই নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চাই এবং সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা চলছিল, আমরা সারা দেশ থেকে মনোনয়ন আহ্বান করেছিলাম। এর পরে আরও দুটি দলের সঙ্গে আমাদের একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল সংস্কার প্রশ্নে। তখন আমরা বলেছিলাম যে, আমরা তিনটি দল মিলে সংস্কার জোট একত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘কিন্তু এরপরেই শরিফ ওসমান হাদির যে শাহাদাতবরণ এবং তাঁকে প্রকাশ্যে গুলি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড, এই শাহাদাতবরণের মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারছি যে, বাংলাদেশে আধিপত্যবাদী আগ্রাসনিক শক্তি এখনো কার্যকর রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যাদের আমরা পরাজিত করেছিলাম, তারা এখনো চক্রান্ত করছে নির্বাচন বানচাল করার জন্য। তারা চক্রান্ত করছে সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য। তারা চক্রান্ত করছে জুলাই প্রজন্মকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য। সেদিন ওসমান হাদির গায়ে গুলি লেগেছে, কালকে আপনার গায়ে লাগবে, পরশু দিন আমার গায়ে লাগবে। কারণ, প্রথম এবং প্রধান টার্গেট করা হচ্ছে এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছে, সারা দেশের তরুণেরা, নাগরিকেরা, শহীদ পরিবার, যারা আহত যোদ্ধা রয়েছে, তাদের।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করেছি যে, আমাদের এই মুহূর্তে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এবং যাতে আধিপত্যবাদী কোনো শক্তি আমাদের এই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে না পারে, সে জন্য আমাদের বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। সেই তাগিদ থেকেই আমরা জামায়াতে ইসলামী ও তাদের যে সমমনা আট দল রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের যে নির্বাচনী সমঝোতা, জাতীয় নাগরিক পার্টি সে নির্বাচনী সমঝোতায় সম্মত হয়েছে। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং এই সমমনা আট দলের সঙ্গে একত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, এই নির্বাচনী সমঝোতা একদিকে যেমন নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জন্য, অন্যদিকে আমাদের প্রথম থেকে সংস্কার ও বিচার প্রশ্নে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম, সেই সংস্কার, বিচার ও আধিপত্যবাদবিরোধী, দুর্নীতিবিরোধী—এই বিষয়গুলোতে আমাদের ন্যূনতম কর্মসূচিও থাকবে। আমরা মনে করছি, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের এই সংকটগুলো রয়েছে, যেখান থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। জুলাই প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে এবং গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী যে আমাদের আকাঙ্ক্ষা, সেটা যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, এ জন্য আমরা একটা বৃহত্তর ঐক্যের জায়গায় পৌঁছেছি।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু ঘোষণাটি দিচ্ছি। ঘোষণাটি ইতিমধ্যেই সমমনা আট দলের সংবাদ সম্মেলন থেকে আপনারা জানতে পেরেছেন। আমরা আগামীকাল আমাদের প্রার্থীর বিষয়ে চূড়ান্তভাবে ঘোষণা দিব। সমঝোতায় আমাদের যে প্রার্থী, তাঁরাই নমিনেশন ফর্ম জমা দিবেন। সারা বাংলাদেশে আমরা একত্র হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। জাতীয় নাগরিক পার্টি ও তাদের সহযোগী সংগঠন গণভোটের পক্ষে ক্যাম্পেইন করবে।’
নাহিদ ইসলাম জানান, যেখানে এনসিপির প্রার্থী থাকবে, সেখানে জোটের অন্য দলগুলো তাদের সহায়তা করবে। আর যেখানে এনসিপির প্রার্থী থাকবে না, সেখানে জোটের অন্য দলগুলোর প্রার্থীদের সহযোগিতা করা হবে।
জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে এনসিপিতে বিভাজন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এনসিপির নির্বাহী বডি রয়েছে। আমরা সেখানে এটা আলোচনা করেছি। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। যেকোনো বিষয়ে মতামত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের ভেটো (আপত্তি) থাকতে পারে, বিরোধিতা থাকতে পারে, সে ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন করবেন কি না, দলে থাকবেন কি না, এটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহমুদা মিতু প্রমুখ।
এদিকে, এনসিপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আজ রোববার বিকেল ৫টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা আট দল অনেক দিন ধরে একসঙ্গে আন্দোলন করে আসছি। এখন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি। আমাদের আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত, কিছু আলোচনা বাকি আছে। সেগুলো আশা করি শিগগির শেষ হবে। এরপর আমরা ঘোষণা করব।’