‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আবার শ্রমিক হত্যা হলো। গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার আকাঙ্খা নিয়ে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হলেও শ্রমজীবী মানুষ এই বৈষম্যের মধ্যেই আছে। নেই চাকরির নিশ্চয়তা এবং কর্মক্ষেত্রে নেই কাজের পরিবেশ। এরই মধ্যে অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন কর্মসংস্থান নাই। কারখানা বন্ধের বিরুদ্ধে কথা বললে শুধু হামলা মামলা নয়, গুলি খেতে হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত না হলে শ্রমিকেরা পথে নামবে।’
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডের শ্রমিকদের ওপরে হামলা এবং যৌথ-বাহিনী কর্তৃক গুলি করে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন জোটের নেতৃবৃন্দ।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের পলিটবুর্যোর সদস্য অধ্যপক আব্দুস সাত্তার, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে বেশি কিছু চাই না। কিন্তু যতক্ষণ তারা ক্ষমতায় আছে, ততক্ষণ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, হত্যা-হামলা বন্ধ করতে হবে, চাকরির গ্যারান্টি দিতে হবে। যদি তা না করে, তবে শ্রমিকরা পথে নামবে, সংগ্রাম তীব্র হবে। আমরা চাই না দেশ অস্থিতিশীল হোক, কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর।’
প্রিন্স বলেন, ‘এই শ্রমিক হত্যা কেন হলো? যদি যৌথ বাহিনী গুলি চালিয়ে হত্যা করে থাকে, তবে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে হবে।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘এই সরকার জনগণের নয়, অন্য স্বার্থ রক্ষা করছে। আমরা জানি এটা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সময়। তাই আমরা বলেছি, দ্রুততম সময়ে ক্ষমতা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু সরকার যত দেরি করছে, ততই শ্রমিকদের বুকে শুধু গুলি নয়, দেশকেও সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির হাতে বেঁধে দিচ্ছে।’
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, নীলফামারীতে উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রিন নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি ৫১ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ নিয়ে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এভারগ্রিন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল (২ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটায় কাজে যোগ দিতে গিয়ে এভারগ্রিন কারখানার শ্রমিকেরা ওই নোটিশ দেখতে পান। ভেতরে ঢুকতে না পেরে তাঁরা ইপিজেডের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এই যে পরিস্থিতির দায় মালিকপক্ষকেই নিতে হবে।
তারা আরও বলেন, শ্রমিকদের ওপরে হামলা এবং শ্রমিক হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে। এই সরকারের আমলে বিগত দিনেও শ্রমিকের রক্ত ঝরেছে তার দায়ও সরকারকে নিতে হবে।