আওয়ামী লীগ নেতাদের মিথ্যাচারের জবাব দিতে রুচিতে বাধে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির যৌথ সভা শেষে এ কথা জানান তিনি।
‘আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তা অতীতে কখনো হয়নি এবং এ দেখে অনেকের গায়ে জ্বালাপোড়া হচ্ছে’—আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন কথার জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁদের কথার উত্তর দেওয়ার মতো রুচি আর আজকাল আমাদের হয় না। এত মিথ্যা, এত মিথ্যাচার যে রুচিতে বাধে আমাদের।’
দেশের মানুষ জেগে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রামে ইতিমধ্যেই আমাদের ১৫ জন নেতা শহীদ হয়েছেন। গত ১৫ বছরে আমাদের ছয় শতাধিক নেতা গুম হয়েছে। সহস্রাধিক নেতা খুন হয়েছে। ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করেছে।
‘এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য যে ১০ দফা ঘোষণা করা হয়েছে, তা নিয়ে আজকে গোটা জাতি রাস্তায় নেমে পড়েছে। এই ১০ দফার মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা তারা বলে, সেই চেতনা তারা বেমালুম গিলে ফেলেছে। নষ্ট করে ফেলেছে, ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই চেতনা ছিল একটা মুক্ত সমাজ, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম করছি।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক শুধু নয়, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি জানান, ১৯ জানুয়ারি সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত এবং পুষ্পমাল্য অর্পণ, বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিনটি উপলক্ষে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ১৮ তারিখে ছাত্রদলের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ১৭ তারিখে মহিলা দল শীতবস্ত্র বিতরণ করবে, ২০ তারিখে জাসাস সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে, শ্রমিক দল ২১ তারিখে ও মুক্তিযোদ্ধা দল ২২ তারিখে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। ২৩ তারিখে কৃষক দল, ২৪ তারিখে যুবদল ও ২৬ তারিখে স্বেচ্ছাসেবক দলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
জিয়াউর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনের স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের আমূল পরিবর্তন সাধন করেছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়েই সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক বা সেনানায়ক ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। যেখানে মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের বৈষম্য দূর হবে, অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে যে রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে।’
জিয়াউর রহমান মাত্র ছয় বছরের মধ্যে একটি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে হতাশা থেকে আশা দেখিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের একক দাবিদার বলে যারা নিজেদের দাবি করে, তারা আমাদের গণতন্ত্রের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল—সেগুলোকে নস্যাৎ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে জাতিকে গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে যে জাতিকে তিনি গণতন্ত্র দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, বিভাজনের রাজনীতি বাদ দিয়ে ঐক্যের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। কিন্তু গত ১৫ বছরে অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা-গুমের রাজনীতির মধ্য দিয়ে আবারও বিভক্তির রাজনীতি সূচনা করে একদলীয় দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়ার কাজ করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।