যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির প্রার্থিতাপ্রত্যাশী ছিলেন চারজন। আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থিতা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। বাকি তিনজন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও তৃপ্তির প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় এই তিন প্রার্থীই কোমর বেঁধে নতুন করে মাঠে নেমেছেন। ফলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্যে।
শার্শার মতো কোন্দল যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা), যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনেও। এই তিনটি আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্যে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যশোরের ছয়টি আসনের পাঁচটিতে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফাঁকা আসন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ঘোষিত পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনে চূড়ান্ত সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে। ঘোষিত প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও প্রার্থিতাবঞ্চিতরা প্রার্থি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। বঞ্চিতরা নিজ দলের প্রার্থীকে ব্যর্থ প্রমাণে প্রতিদিনই সভা-সমাবেশে একে অন্যকে ঘায়েল করে দিচ্ছেন বক্তব্য। এতে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাড়ছে উত্তাপ-উত্তেজনা।
গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই যশোর-১ আসনে চারজন নিজ নিজ বলয় নিয়ে মাঠ গোছানোর কাজ করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থিতা না পাওয়ায় হতাশ শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনের অনুসারীরা।
শার্শা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির বলেন, ‘তৃপ্তিকে দল প্রাথমিক সম্ভাব্য প্রার্থিতা দিয়েছে। তাঁর প্রার্থিতায় দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা খুশি নয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের এখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। আমরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছি।’
এদিকে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানা মুন্নী। দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থিতা পেয়েই একবার ঝিকরগাছা আরেকবার চৌগাছার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে ছুটে বেড়াচ্ছেন মুন্নী। তবে এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন অন্য প্রার্থিতাপ্রত্যাশী অন্যরা। এ কারণে তাঁরা এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। প্রার্থিতা পরিবর্তনের আবেদন জানিয়ে ১০ নভেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন ঝিকরগাছা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুন ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল সালাম। নতুন করে প্রার্থিতার দাবিতে গত শুক্রবার আসনটিতে মোটরসাইকেল শোডাউন করেছেন যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। পৃথক কর্মসূচি করে বেড়াচ্ছেন আরেক প্রার্থী চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলামও। সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মীরা বলেছেন, আসনটিতে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের ডা. মোসলেহউদ্দিন ফরিদ। তিনি নিজের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই আসনে বেশ কিছুদিন ধরে জনসংযোগ চালিয়ে আসা মিজানুর রহমান খান এখনো মনে করছেন, দল প্রার্থী পুনর্বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থিতা দেওয়ার আগেই তারেক রহমান নিজে আমাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। সে অনুযায়ী কাজ করছি।’ জানতে চাইলে সাবিরা সুলতানা বলেন, ‘জনসংযোগে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। প্রতিটি পথসভায় নারী ও পুরুষের উপস্থিতি প্রায় সমান।’
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা পেয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুব। তিনি জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। এই আসনে আরও দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁদের একজন ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ। তিনি আইয়ুবের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তবে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমানকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা পেয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। প্রায় এক যুগ পরে এলাকায় ফিরে তিনি গণসংযোগ শুরু করেছেন। এই আসনের দুজন প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ প্রার্থিতা না পাওয়ায় তাঁর অনুসারীদের এখনো শ্রাবণের পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়নি।
ব্যতিক্রম যশোর-৩
যশোর-৩ (সদর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থিতা পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় এই আসনে কোন্দল নেই। অমিতকে ঘিরে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এই আসন জোটের শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে দলের কোনো চমক থাকছে, সেটি পরিষ্কার নয়। গুঞ্জন রয়েছে জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহকারী মহাসচিব ও এই আসনের সাবেক এমপি, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মুফতি ওয়াক্কাসের ছেলে মাওলানা রশিদ আহমাদকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হবে এমন আশায় এখনো মাঠে কাজ করছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদ মোহাম্মদ ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থিতা না পাওয়া প্রার্থিতাপ্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা রয়েছে। তবে চূড়ান্ত প্রার্থিতা দেওয়ার পর নেতা-কর্মীরা ব্যক্তি নয়; সবাই ধানের শীর্ষের পক্ষে কাজ করবে।