অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে গতকাল বুধবার পদত্যাগ করেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এর পর থেকেই জনমনে প্রশ্ন ওঠে—কোন দলে যোগ দিচ্ছেন তিনি? কাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াবেন সদ্য পদত্যাগ করা এই উপদেষ্টা?
এ-সংক্রান্ত আলোচনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের নাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আসিফ মাহমুদ যাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকার পতন করেছিলেন, সেই সহযোদ্ধাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) তাঁর যোগদানের আলোচনা তেমন একটা জোরালো নয়।
এনসিপির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদে আসিফ মাহমুদের যোগদানের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
তাঁরা জানিয়েছেন, গণঅধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদে দীর্ঘদিন রাজনীতি করা আসিফ মাহমুদের দলটিতে ফেরার আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।
গণঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসিফের সঙ্গে আমাদের কথা চলছে। এর আগেও সে গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। দলে তাঁকে সম্মানজনক পদ দেওয়া হবে—এ নিয়ে আলাপ হয়েছে। খুব শিগগিরই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আমরা যেকোনো মূল্যে তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনতে চাই।’
আসিফ মাহমুদের গণঅধিকার পরিষদে যোগদানের বিষয়ে দলের সভাপতি নুরুল হক নুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তবে কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
একাধিক সূত্র বলছে, আসিফের যোগদানের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে গণঅধিকার পরিষদে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর দলীয় অবস্থান, নেতৃত্বের রদবদল ও নতুন জোট রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অনেকেই আসিফের দলে প্রত্যাবর্তনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
তবে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, সদ্য পদত্যাগ করা উপদেষ্টার আগমনে দলের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
সূত্রগুলোর মতে, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে আসিফ যোগ দিতে পারেন—এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এমনটা হলে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়তে পারেন রাশেদ খান।
এদিকে, রাশেদ খানের নেতৃত্বে অনাস্থা জানিয়ে তাঁর পদত্যাগ চেয়ে আজ নুরুল হক নুরের কাছে চিঠি দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আব্দুজ জাহের।
চিঠিতে রাশেদ খান দলীয় নীতি, আদর্শ ও গঠনতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আব্দুজ জাহের। এতে দলের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে, ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং গণঅধিকার পরিষদের মূল লক্ষ্যের প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। রাশেদ খানের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকা সংগঠনের অখণ্ডতা ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ‘গুরুতর হুমকি’ তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আব্দুজ জাহের।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি আসিফ মাহমুদের সঙ্গে দলীয় দৃষ্ঠিভঙ্গির বাইরে ভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন রাশেদ খান। এতে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আব্দুজ জাহেরের পাশাপাশি আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা রাশেদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
এদিকে আজ বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে আসিফ মাহমুদের প্রশংসা করে তাঁকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছেন নুরুল হক নুর।
পোস্টে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আসিফ ‘সংগ্রামের নেতা’। শিগগিরই তিনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
নুরের প্রকাশ্য এই বার্তা গণঅধিকারে চলমান উত্তেজনায় ঘি ঢেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দলীয় রাজনীতিতে যোগদানের বিষয়ে বিএনপি ও এনসিপিসহ একাধিক দলের সঙ্গে আসিফের আলোচনা চলছে বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
উপদেষ্টার পদ থেকে গতকাল পদত্যাগের আগে সচিবালয়ে ডাকা জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘আমি নির্বাচন করব। তবে কোথা থেকে, কীভাবে করব—সে আলোচনা চলছে।’
এনসিপিতে যোগদানের গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ধরে নেওয়া ঠিক হবে না যে আমি এনসিপিতেই যোগ দিচ্ছি।’