ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই ‘হত্যার হুমকি’ পাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। গত নভেম্বর মাসে ৩০টিরও বেশি বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরে রিকশায় থাকা অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
গত ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে দেওয়া এক পোস্টে শরিফ ওসমান হাদি সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে লিখেছিলেন—‘গত তিন ঘন্টায় আমার নাম্বারে লীগের খুniরা অন্তত ৩০টা বিদেশী নাম্বার থেকে কল ও টেক্সট করেছে। যার সামারি হলো- আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে। আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধ র্ষণ করবে। এবং আমাকে হ’ ত্যা করবে।’
ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘১৭ তারিখ খুni হাসিনার রায় হবে। ১৪০০ শহীদের রক্তের ঋণ মেটাতে কেবল আমার বাড়ি-ঘর না, যদি আমাকেও জ্বালিয়ে দেয়া হয়, ইনসাফের এই লড়াই হতে আমি এক চুলও নড়বো না, ইনশাআল্লাহ। এক আবরারকে হ’ ত্যার মধ্য দিয়ে হাজারো আবরার জন্মেছে এদেশে। এক হাদিকে হ’ ত্যা করা হলে তাওহীদের এই জমিনে আল্লাহ লক্ষ হাদি তৈরি করে দিবেন। স্বাধীনতার এই ক্রুদ্ধ স্বরকে কোনোদিন রুদ্ধ করা যাবে না। লড়াইয়ের ময়দানে আমি আমার আল্লাহর কাছে আরও সাহস ও শক্তি চাই। আরশ ওয়ালার কাছে আমি হাসিমুখে শহীদি মৃত্যু চাই। আমার পরিবার ও আমার কলিজার সহযোদ্ধাদেরকে আল্লাহ তায়ালার কুদরতি কদমে সোপর্দ করলাম। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। হাসবিয়াল্লাহ।’
উল্লেখ্য, আজ জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় হাদির ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা মোট তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসেছিল বলে জানান তিনি। রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হাদির একজন সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে তাদের লিফলেট বিলি কর্মসূচি ছিল। কথা ছিল লিফলেট বিলি শেষে সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়ে দুপুরের খাবার খাবেন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক চিকিৎসকের বরাতে বলেন, ওসমান হাদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় এবং আইসিইউতে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর সতীর্থরা ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ‘বি নেগেটিভ’ রক্ত জোগাড় করার জন্য চেষ্টা করছেন।
জুমার নামাজের আগে বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে হাদি সর্বশেষ ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন—‘যেহেতু ঢাকা-৮ এ আমার পোস্টার-ফেস্টুন কিছুই নাই, তাই আমার এখন ছেঁড়া-ছিঁড়িরও চাপ নাই। দুদকের সামনে থেইকা জুম্মা মোবারক।’
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ বিকেল ৫ টার পর আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তাঁর (ওসমান হাদি) মাথার ভেতরে গুলি আছে। বর্তামানে অপারেশন থিয়েটারে তাঁর সার্জারি চলছে।’