বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বড় কিছু অর্জন করতে হলে যুগে যুগে আত্মত্যাগ করতে হয়, প্রাণ দিতে হয়। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তখন লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। আজকে আবারও একটা দুঃসময় এসে উপস্থিত হয়েছে। এ থেকে উত্তরণে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমরা জয়ী হবই।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চলমান আন্দোলনে নিহত নেতাদের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা দানব আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু এই শিশুদের ভবিষ্যৎ আমরা তৈরি করতে চাই। প্রয়োজনে আমরা আমাদের রক্ত দিয়ে হলেও তাদের জন্য একটি সুন্দর আবাসভূমি তৈরি করব। আমরা যে যুদ্ধে নেমেছি, সে যুদ্ধে আমরা জয়ী হবই।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের ভাইয়েরা বীরের মতো গেছেন। তাঁরা কেউ পেছনে পালাতে গিয়ে শহীদ হননি। তাঁরা সম্মুখযুদ্ধে সামনে দাঁড়িয়ে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হয়েছেন। তাঁরা আমাদের সকল সহকর্মীদের উদ্দীপ্ত করেছেন। তাঁদের এই আত্মোৎসর্গ এই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
বড় কিছু অর্জন করতে হলে যুগে যুগে আত্মত্যাগ করতে হয় জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘’৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তখন লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। তখন অনেক পরিবার অসহায় হয়ে গিয়েছিল। আজকে আবারও একটা দুঃসময় এসে উপস্থিত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নিহত নুরে আলম ভূঁইয়ার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমার স্বামীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করা হত্যা করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর শোক বলতে না পেরে আমার শ্বশুর আজ সকালে মৃত্যুবরণ করেছে। এই হত্যা মামলার বাদী হওয়ায় আমাকে অনেক দিক থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। বাগেরহাটের অনেকেই চায় না এ হত্যার বিচার হোক।’
পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা আক্তার বলেন, ‘আমরা যে কী অবস্থায় আছি, এটা শুধু আমি আর আমার মেয়ে জানি। আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। আমাদের জন্য তিনি কিছু রেখেও যেতে পারেনি। আমার স্বামীকে নির্মমভাবে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’
পঞ্চগড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আব্দুর রশিদ আরেফিনের স্ত্রী শিরিন আক্তারকে কথা বলার আহ্বান জানানো হলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং কথা না বলেই মঞ্চ ত্যাগ করেন। এ সময় পুরো অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ‘এই পরিবারগুলোর ক্ষতি আমরা কখনোই পোষাতে পারব না। তবে আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আগে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আমাদের জোট রাজনীতি বিলীন হয়ে যায়নি, বরং যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল ও জোট আরও সুদৃঢ় হবে।’
এ সময় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, সাম্যবাদী দল, গণদল, ন্যাপ ভাসানী এবং মাইনরিটি পার্টির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।