চির বসন্তের দেশ শুনেছি আছে, কিয়োটো। চির যৌবনের দেশ যে আছে, আর আমি যে চিরযুবা তা ভুলেই বসেছিলাম। প্রাক্-সত্তুরে এসে দিন গণনার বেভুল মুদ্রাদোষে ঘটে গেছে এই ভুল, আপন জীবনকে জরাগ্রস্ত করে ফেলেছিলাম। আমার গানে বসন্তপঞ্চমী আছে, প্রবীণ বৃক্ষটি বহুকুঞ্জময়। সেই কুঞ্জ নিত্যকাকলিত। আমার যে চিরসখি আছে, চির-নবীন—ভুলেই গিয়েছিলাম।
তার অঞ্চলে বাতাস, চুল উড়ছে, পায়ে নূপুর। যমুনার রূপালি রৌদ্রে বাজছে নিক্বন। মন, বাঁশি বাজাও, ‘সুরে সুরে বাঁশি পুরে/তুমি আরো আরো আরো দাও তান’। তুমি তো শুধু দেহ ঘাঁটতে আসোনি, এসেছ বাঁশি বাজাতে, এসেছ জীবনের গভীরে নামতে, ভুবনে আসন পাততে।
অতএব তুমি আমৃত্যু অশেষ যৌবনা। ভুল ধারণায় বিফল কোরো না সে যৌবন। যৌবন হারায় না। যার বাস দেহে, সে দেহের সঙ্গে হারায়; যার বাস মনে—সে কেমনে জীর্ণ হয়?
কী ভুল করল মানুষ! যৌবনকে যারা বসন্তের সাথে তুলনা করল, তারা ঋতুকে চিনল, জীবন চিনল না। জীবন কোনো ঋতু নয়, শীত এলে বসন্ত যায়, কিন্তু কোনো শীত পারে না যৌবনকে হটাতে। বর্ষা-বসন্তের মতো শীত-গ্রীষ্মেও সমান দুরন্ত যৌবন।
যে প্রেম দেহ ঘেঁটে পাওনি, আজ তা গানে পাবে। বার্ধক্যই প্রকৃত প্রেমের বয়স।