হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

স্টার্টআপই হতে পারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত

প্রজ্ঞা দাস

স্টার্টআপ হলো এমন এক ধারণা, ব্যবসা শুরু করার আগে নতুন এক আইডিয়া, যা আগে কেউ চেষ্টা করেনি। উদাহরণস্বরূপ, হোয়াটসঅ্যাপের মতো কোম্পানির কথা ভাবুন। এটি দুটি বন্ধুর একটি ছোট ধারণা হিসেবে শুরু হয়েছিল। যারা প্রতিটি মেসেজের জন্য অর্থ প্রদান না করেই তাদের ফোনে একে অপরকে মেসেজ এবং ফটো পাঠানোর জন্য একটি নতুন উপায় তৈরি করতে চেয়েছিল। এই হলো স্টার্টআপ—একটি ছোট, নতুন ধারণা দিয়ে শুরু করা এবং এটিকে বড় এবং সফল করার চেষ্টা করা।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি হয়েছে পোশাকশ্রমিক, কৃষক, প্রবাসীদের মতো শ্রমজীবী মানুষের ঘামে। কিন্তু এই প্রজন্ম সেই ঘামের সঙ্গে যুক্ত করেছে বুদ্ধিমত্তা। ফলে প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো কোণে তরুণ-তরুণীরা নিজের ধারণা দিয়ে গড়ে তুলছে নতুন কিছু। কখনো তৈরি করছে নতুন কোনো অ্যাপ, কখনো অনলাইন সেবা, কখনো কৃষি বা শিক্ষা নিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ। কারণ, তারা বুঝেছে আজকের বিশ্বে জ্ঞানই আসল সম্পদ আর প্রযুক্তিই আসল পুঁজি। একটা ল্যাপটপ, সামান্য মূলধন, আর অদম্য ইচ্ছাকে পুঁজি করেই তারা বদলে দিচ্ছে আমাদের ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের চিত্র। সরকারি হিসাব মতে, ২০২৫ সালে দেশে সক্রিয় প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে এবং এই সেক্টরে বিনিয়োগের মাত্রায়ও এক অভূতপূর্ব উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এর পরিমাণ প্রায় ১১৯.৯ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারি তথ্যমতে, এই স্টার্টআপগুলোতে সরাসরি কাজ করছে প্রায় এক লাখ তরুণ, আর পরোক্ষভাবে এর সুফল পাচ্ছে লাখো সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ এখন সফটওয়্যার এক্সপোর্ট, ফিনটেক, এগ্রিটেক, হেলথটেক, এডুটেকসহ সবখানেই নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। সরকারি নীতিতেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। যেখানে আগে প্রশাসনিক জটিলতায় স্টার্টআপদের পিছিয়ে দিত, আজ সেখানেই সরকার সহায়ক কাঠামো গড়ে তুলছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (বিএইচটিপিএ) ইতিমধ্যেই ১২০০-র বেশি স্টার্টআপকে সহায়তা দিয়েছে। ‘আইডিয়া প্রজেক্ট’ উদ্ভাবনকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় দেখা যায়, কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং ও ইকুইটি পাথওয়ের সুযোগ রয়েছে স্টার্টআপের জন্য, যা দেশীয় পুঁজি প্রবাহকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করছে।

তবে এই উজ্জ্বলতার মাঝেও অদৃশ্য কিছু সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। স্থানীয় বিনিয়োগের অভাবে বিদেশি পুঁজির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার ওঠানামা ও ভূরাজনৈতিক চাপের কাছে বড্ড দুর্বল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, লাইসেন্সিং জটিলতা উদ্যোক্তাদের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি, বিশেষত স্টিম শিক্ষার (স্টিম শিক্ষা হলো বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত—এই চারটি বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি শিক্ষণ পদ্ধতি, যা বাস্তব-বিশ্বের সমস্যা সমাধানে হাতে-কলমে এবং প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দেয়) সীমাবদ্ধতা প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ সম্প্রসারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার স্টার্টআপগুলোর বেশির ভাগ রাজধানী ও প্রধান শহরকেন্দ্রিক হিসেবে গড়ে উঠেছে। ফলে প্রযুক্তিগত বিকাশের ভৌগোলিক বৈষম্য রয়েই গেছে, যা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকে ব্যাহত করছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট অ্যাকসেস, ডিজিটাল লিটারেসি ও ব্যাংকিং ট্রাস্ট এখনো অপর্যাপ্ত, যা ডিজিটাল অর্থনীতির গতিকে থামিয়ে দিচ্ছে। তবু সম্ভাবনার আকাশ এখনো প্রশস্ত।

এখন দরকার কাঠামোগত বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া, যাতে এই রূপান্তরের ক্ষেত্র দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থায় স্টিমকেন্দ্রিক রিফর্ম ও উদ্যোক্তা মানসিকতা বিকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইনোভেশন, ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। আর ট্যাক্স ব্রেকস, সহজ লাইসেন্সিং ও স্বচ্ছ ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব রেগুলেটরি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে।

এই উদ্যোক্তা সংস্কৃতিকে শুধু তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগ হিসেবে নয়, জাতীয় অর্থনৈতিক রণকৌশলের অংশ হিসেবে দেখতে হবে।

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ

বুদ্ধিজীবী দিবস যেন ভুলে না যাই

উড়োজাহাজগুলোও পরিবেশের ক্ষতি করছে

যে প্রশ্নগুলোর জবাব পেতে হবে

পুতিনের ভারত সফর: আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতিতে কী বার্তা দেয়

বিজয়ের মাসে শঙ্কার কথা বলি

পথকুকুর-বিড়াল হত্যা: আইন এবং শাস্তি

জীবনের অপরিহার্য অংশ সংগীত ও শরীরচর্চা

দুর্নীতি রোগে আক্রান্ত আফ্রিকা

মার্কিন নিরাপত্তা কৌশল কি আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের ব্লুপ্রিন্ট

ইমরান খান প্রতিরোধের প্রতীক