বর্তমান পৃথিবীতে টিকে থাকতে ও নিজেকে সমৃদ্ধ করতে এ দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। বাংলাদেশে আজ সবাই শিক্ষার দিকে ঝুঁকেছে, কারণ তারা জানে উন্নত জীবনযাপনের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭৭.৯ শতাংশ। আমাদের দেশে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য রয়েছে অনেকগুলো পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এই সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৪০-৫০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। প্রতিবছর এই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ইউরোপের দেশগুলো, এ ছাড়া রয়েছে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া। প্রধান কারণ এ দেশগুলোতে উন্নত সুযোগ-সুবিধা বেশি, উন্নত জীবনের হাতছানি, ভালো পড়াশোনার সুযোগ এবং চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা, দেশে যোগ্যতার অবমূল্যায়ন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি। যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশই অত্যন্ত মেধাবী, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যেসব শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যাচ্ছেন তাঁদের যাওয়ার উদ্দেশ্য শুধুই ডিগ্রি অর্জন নয়, বরং সেই দেশে স্থায়ী হওয়া। তাঁরা আর দেশে ফেরত আসতে চান না। ফলে ঘটছে ব্রেন ড্রেন বা মেধা পাচার। দেশের মেধা বিদেশে চলে যাচ্ছে। মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে বিদেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে।
শিক্ষার্থীদের বিদেশে স্থায়ী হওয়ার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে—যেমন দেশে সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়া, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেও বেকার থাকা। আজ বিশ্বের শীর্ষ অনেক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিরা উচ্চপদে চাকরি করছেন। কারণ, উন্নত দেশগুলো মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে চাকরি দেয়। কর্মক্ষমতা দেখে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিতে আগ্রহী হচ্ছে, সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রত্যেক তরুণের স্বপ্ন থাকে দেশের সেবা করা, কিন্তু যখন তাঁরা দেশে উপযুক্ত মূল্যায়ন পান না, তখন তাঁরা বিদেশে উন্নত জীবনের জন্য পাড়ি দেন। ফলে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী নতুন চিন্তা-উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে হবে।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে যাওয়া দোষের নয়, দেশের ক্ষতির কারণ হলো উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে আর না ফেরা। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন এমন তরুণদের দেশের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। দেশের সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির বিকল্প কিছু নেই।
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়