রাজনীতি কোন পথে যাত্রা করেছে, তা কি সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে? যে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির মাঠে সক্রিয়, তারা নির্বাচনের জন্য কতটা তৈরি হয়ে আছে, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটছে না। বলা হচ্ছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। রমজানের আগেই নির্বাচন সুসম্পন্ন হবে বলে অনেকেই আশা প্রকাশ করছেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে দেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে নিজের পছন্দমতো ভোট দেবেন।
রাজনীতি নিয়ে দেশের জনগণ বেশ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে রয়েছে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণ মানুষকে দুই রকম ভোট একই সঙ্গে দেওয়ার বিষয়টি ঠিকঠাকভাবে বোঝানো যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিগত সময়ে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তাই এবার যেন ভোটার নিজের ভোটটি ইচ্ছেমতো দিতে পারেন, সে রকম একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া প্রয়োজন। গণভোটের প্রসঙ্গ নিয়েও অনেক ধরনের তর্কবিতর্ক হচ্ছে। গণভোটে চারটি প্রশ্ন থাকায় কেউ যদি তিনটির পক্ষে থাকে এবং একটির বিপক্ষে থাকে, কিংবা দুটির পক্ষে থাকে এবং দুটির বিপক্ষে থাকে, তাহলে ভোটার ‘হ্যাঁ’ নাকি ‘না’ ভোট দেবেন, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই এ বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখবে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে হানাহানি বেড়ে গেছে। কোনো কোনো দলের কোনো কোনো নেতা যে ভাষায় কথা বলছেন, তাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক প্রকাশভঙ্গি বলা যাবে না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নানা ধরনের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ অবস্থায় ঠিক কাজটি করতে পারছে কি না, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এলাকার রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেললে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে।
দেশের সাধারণ জনগণ নিজের ইচ্ছায় নিরাপদে নিজের ভোটটি দিতে চাইছে। জনগণের মনে সত্যিকার সাহস জোগানোর কাজটি এখন খুবই জরুরি কাজে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে করা যাবে কি না, তা নির্ভর করছে এ সময়টিতে সেভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়া যাচ্ছে কি না, তার ওপর। প্রস্তুতিতে সমস্যা যেন না থাকে, তার দায়িত্ব নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগ, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে যে অস্থিরতা রয়েছে, তা কেটে যাবে বলে মনে করে অভিজ্ঞ মহল। অনেক ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নীতি-অস্পষ্টতা এবং ব্যাংকিং বা মনিটারি সমস্যার কারণে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমেছে। সেই আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা একান্ত জরুরি। দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য যেন পূর্ণ নিরাময়ের গ্যারান্টি পায়, তা নিশ্চিত করা দরকার। তবে এ কথাও ঠিক, রপ্তানি, রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা সুসংবাদ দেয়।
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দুর্নীতি করে না। তারা দুবেলা দুমুঠো খেতে পেলেই শান্তি পায়। নির্বাচনের মাধ্যমে সে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে রাজনৈতিক বিজয় অর্জিত হবে।