হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

লন্ডন বৈঠক

সম্পাদকীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রস্তাবিত বৈঠকের খবর রাজনীতিতে নতুন করে নানামুখী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ১৩ জুন এ দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যকার বৈঠক কেবল একটি রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যেসব প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তার জবাব বা সমাধানসূত্রও পাওয়া যেতে পারে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করে আসছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের কথা। এ অবস্থায় বিএনপির পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে এবং ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে অনড় রয়েছে। বিএনপির অবস্থান পরিবর্তন না হলে এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। রাজনীতিতে দেখা দেবে বড় ধরনের সংকট। আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা এখন অতীব জরুরি।

এই প্রেক্ষাপটে লন্ডনে ইউনূস-তারেক সাক্ষাতের খবর রাজনীতির আলোচনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর আগে ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের একাধিকবার কথা হলেও এবার সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। এটা রাজনৈতিক সমঝোতার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বৈঠকে তারেক রহমান ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেবেন বলে জানা গেছে। এটি একদিকে সরকারের ঘোষিত সময়ের চেয়ে আগের সময়সীমা, অন্যদিকে বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি ডিসেম্বরে ভোটের কিছুটা ছাড়ও বটে। তাই এটিকে শুধুই রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি না ভেবে সমঝোতার একটি ইঙ্গিত হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই সাক্ষাৎ শুধু সৌজন্যপূর্ণ আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি ফলপ্রসূ একটি রাজনৈতিক অগ্রগতির দিকে যাবে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন বহু সংলাপই হয়েছে, যার ফল শেষ পর্যন্ত ‘অমীমাংসিত’ থেকে গেছে। জনগণ বারবার আশার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বা বাস্তব অগ্রগতি হয়নি।

আজ যে পরিস্থিতি, তাতে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের কাছ থেকেই প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা, আত্মসংযম ও বাস্তববাদী কৌশল। প্রধান উপদেষ্টার উচিত আস্থাশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে সব দলকে গ্রহণযোগ্য একটি সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। আর বিএনপির উচিত নির্বাচনের দাবি শুধু সময়ের ওপর না রেখে, অংশগ্রহণের রূপরেখা, স্বচ্ছতা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দেওয়া।

এই মুহূর্তে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, দরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সাহসী উদ্যোগ। ১৩ জুনের বৈঠক হতে পারে সেই সম্ভাবনার জানালা। কিন্তু সেই জানালা খুলবে কি না, তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা, বাস্তব উপলব্ধি এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার ওপর।

জনগণ এখন আশাবাদী, কিন্তু ক্লান্ত। কারণ তারা প্রতিশ্রুতি নয়, ফলাফলের অপেক্ষায় আছে। সংলাপ, সমঝোতা আর আলোচনার পেছনে যেন আরেকটি ‘মুলতবি’ ভবিষ্যৎ না লুকিয়ে থাকে। বরং লন্ডনের সম্ভাব্য সাক্ষাৎ হোক বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা।

যা করণীয়

ভারতজুড়েই কি ফুটবে পদ্মফুল

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সমুদ্রস্তরের উত্থান ও দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা

সংকটেও ভালো থাকুক বাংলাদেশ

মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা

পাঠকের লেখা: বিজয় অর্জনের গৌরব

নিরাপত্তাহীনতা

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের কি বিচ্ছেদ হলো

একাত্তরে সামষ্টিক মুক্তি আসেনি