যখন কোনো কারণে একটা জায়গার তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে, সেখানে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যায়। এর প্রভাবে সেখানকার আকাশে প্রচণ্ড মেঘ জমে। এ ঘটনাটা ঘটে অল্প কিছু সময়ের জন্য। এ অবস্থা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এই সময়ের মেঘগুলো খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে। এই মেঘ থেকে তৈরি হওয়া বজ্রও অনেক শক্তিশালী হয়।
গতকাল বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীর যে অংশে বজ্রপাত হয়েছে, সেখানে এ রকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেখানে তিন-চার দিন ধরেই তাপমাত্রা ছিল বেশি। নৌকায় যারা ছিলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা একটা টিনের ঘরে আশ্রয় নেন। টিনের ঘর না হয়ে তাঁরা যদি একটা পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিতেন, তাহলে এতটা বেশি প্রাণহানি ঘটত না। এই ঘটনা থেকে এটা নিশ্চিত যে, সেখানে যে বজ্রপাত হয়েছে, তা অনেক শক্তিশালী।
বজ্রপাত নিয়ে আমাদের আসলে তেমন কিছু করার নেই। কারণ, জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো হাতিয়ার বা প্রযুক্তি এখনো আমাদের হাতে নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা নেই। যে কারণে বলতেই হচ্ছে, তাঁরা যদি ওই সময় একটু দেখে বের হতেন, তাহলে হয়তো এমন প্রাণহানির ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না। বজ্রপাতে প্রাণহানি এড়াতে আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি এভাবে যে, এখন বৃষ্টি হচ্ছে, এই সময়টা বের হলাম না। একটু পরে বের হলাম। এখন আকাশে কালো বজ্র মেঘ তৈরি হচ্ছে, একটু সময় দেখে বের হই। এই বিষয়গুলো মেনে চলা ছাড়া আমাদের আপাতত কিছু করার নেই। আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধির একটি বড় নিয়ামক। তাই তাপমাত্রা কমানোর পাশাপাশি বায়ুদূষণ কমাতে হবে। বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রযুক্তি না থাকায় সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ বিশেষ জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক এম এ ফারুক
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়