একটা সময় হয়তো সবাই বিশ্বাস করতে পারত যে মা-বাবার পর সবচেয়ে বেশি নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যায় শিক্ষকের কাছে। একজন শিক্ষক যে আদর্শ ধারণ করেন এবং শিক্ষাদানের মতো যে মহান কাজে নিয়োজিত থাকেন, তাতে করে সমাজে সব সময়ই শিক্ষাগুরুর মর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকের কাজ আদর্শ মানুষ গড়ে তোলা, যে মানুষ দেশের কল্যাণে ভূমিকা পালন করবেন, দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করবেন। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে শিক্ষকতা একটি সম্মানীয় পেশা হতে পারে, সেই শিক্ষক শ্রদ্ধার পাত্র না-ও হতে পারেন! তিনি আদর্শবান না হয়ে ভয়ংকরও হতে পারেন!
২০ ডিসেম্বর এমন একটি মন খারাপ করা সংবাদ ছাপা হয়েছে আজকের পত্রিকায়। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কোচিং ক্লাসে বিভিন্ন সময় তিনি ওই ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করতেন। গত মার্চে কোচিং ক্লাস চলাকালীন তিনি ওই ছাত্রীকে অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ভয়ভীতি ও পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিয়ে এই নিকৃষ্ট কাজটি তিনি চালিয়ে যেতে থাকেন। নৈতিকতার কী ভয়ংকর অধঃপতন!
চলতি মাসে ওই শিশুশিক্ষার্থীর পরিবার এ নিয়ে সন্দেহ করে। তারা শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করলে সে পুরো ঘটনা জানায়। এরপর পরিবার থানায় অভিযোগ করলে ১৮ ডিসেম্বর অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাহলে পাঠক বুঝতেই পারছেন, শিশুরা কারও কাছেই নিরাপদ নয়। এমনকি যাঁরা শিক্ষকতার মতো মহান কাজে ব্রত, তাঁদের মাঝেও কারও কারও কাছে নয়। কুমিল্লার জঘন্য ঘটনাটিই তার প্রমাণ। এ ধরনের শিক্ষকেরা সবচেয়ে সম্মানজনক পেশাটির মর্যাদাহানি করেন।
এমন অপরাধী মানসিকতার শিক্ষকদের আগে থেকেই চিহ্নিত করতে না পারলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। একজন শিক্ষক নিয়োগের আগে প্রার্থীর পরিচয় আইনিভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। যাচাই করা যায় ওই প্রার্থীর আচার-আচরণ, অপরাধসংক্রান্ত অতীত ইতিহাস, কোনো পরিস্থিতির ওপর প্রার্থীর মতাদর্শ, শিশু সুরক্ষা ও যৌন হয়রানির ওপর তাঁর মতামত ইত্যাদি বিষয়। এরপরও সুনিশ্চিত করে বলা যায় না ওই প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে তিনি যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের মতো কোনো অপরাধ করবেন কি না। তাই নিয়োগের পরও শিক্ষকদের জন্য আচরণ সম্পর্কিত যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
অবশ্যই পরিবার থেকেও শিশুকে বোঝাতে হবে কোনটা ভালো স্পর্শ আর কোনটা মন্দ। কারও মন্দ স্পর্শ পেলে চিৎকার করবে ও দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করবে—এসবও তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অভিভাবকের কাছে এ ধরনের ঘটনার কথা লুকানো যাবে না। ছেলে হোক কিংবা মেয়েশিশু, উভয়কেই এই তালিম দিতে হবে।
সবাই মিলেই শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। সচেতন প্রশ্ন তুলতে হবে—শিক্ষক কেন শিক্ষার্থীর সামনে ভয়ংকর হয়ে উঠবেন?