ঢাকা শহর অনেক বছর ধরেই মুমূর্ষু। বলা যায়, শহরটি আইসিইউতে আছে। কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণে শীর্ষ অবস্থানে থাকার মধ্যেই এবার জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশনপ্রসপেক্টাস ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, জনসংখ্যার ঘনত্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে ঢাকা। এর আগে ঢাকা ছিল নবম জনবহুল নগরী। শহরটির অবস্থা যে ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে, তা নিয়ে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের মাথাব্যথা নেই। ঢাকা নিয়ে এখনই বাস্তবমুখী উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ না করা গেলে, এর ভবিষ্যৎ বড়ই সঙিন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া নানা শহর আবিষ্কারের খবর শোনা যায়। আমাদের দেশেও এ রকম অনেক বিলুপ্ত জায়গার সন্ধান পাওয়া গেছে। হাজার ফুট নিচে কীভাবে শহর তলিয়ে যায়, তার নানান ব্যাখ্যা দেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। কিন্তু সরল মনে আমরা বলতে পারি, নানা প্রাকৃতিক কারণে যখন একটা শহর তার ভার বহন করতে পারে না, তখন সেটা তলিয়ে যায়। সেভাবে আমাদের এই শহরটি যে এমনিভাবে তলিয়ে যাবে না, তার গ্যারান্টি কে দেবে?
ঢাকার বয়স ৪০০ বছর পেরিয়ে গেছে। প্রতিটি জিনিসের যেমন লাইফ গ্যারান্টি থাকে, তেমনি নিয়মিত পরিকল্পনা করে না চললে সে শহরের পতন হয়। ফিটনেসবিহীন গাড়ি যখন সড়কে চলে, তখন নানা ধরনের আপদ-বিপদ ও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে, তেমনি ফিটনেসবিহীন শহর নিয়েও একই আশঙ্কা থাকে।
ঢাকা শহর কেন বসবাস-অযোগ্য নগরী হিসেবে এখনো সচল আছে। কারণ, ঢাকা হলো দেশের সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। এখানে মানুষ চাকরি, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা কারণে আসতে বাধ্য হয়। ফলে শহরটির মধ্যে ব্যাপকভাবে মানুষের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত মানুষের চাপে এখানে যানজট, আবাসন সংকট, পরিবেশ, বায়ু ও শব্দদূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। একদিকে গাছপালা কেটে নতুন নতুন দালানকোঠা নির্মাণ, অন্যদিকে সংখ্যাতিরিক্ত যানবাহন এ নগরীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছে। জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত নিম্নগামী, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে বাস-অযোগ্য শহরগুলোর একটিতে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যে গতিতে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে এ নগরী বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরীতে পরিণত হতে পারে। এটা একটা বিরাট আশঙ্কার জায়গা। এ থেকে মুক্তি পেতে যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ঢাকাকে পরিত্যক্ত নগরী হিসেবে গণ্য করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
ঢাকাকে বাঁচাতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এমনিতেই সময় অনেক পেরিয়ে গেছে। ঢাকাকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ হতে পারে এর বিকেন্দ্রীকরণ। কারণ, চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা বাদেও এখানে নানা কাজে সারা দেশের নানা প্রান্তের মানুষ আসতে বাধ্য হয়। সেই সেবার অফিসগুলোকে যদি ঢাকার আশপাশের জেলায় স্থানান্তর করা যায়, তাহলে এখানে মানুষের চাপ এমনিতেই কমে যাবে।