হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা কেন দরকার

আল শাহারিয়া

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি থাকার কারণে বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলাশয় ভরাট করে নরম মাটির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো মেগা সিটিগুলো ভয়াবহ বিপদের মুখে আছে। ভূমিকম্পের সময় মাটির তরলীকরণ বা লিকুইফেকশনের ঝুঁকি এ ক্ষেত্রে বহুগুণ বেশি। রিখটার স্কেলে বড় মাত্রার কোনো কম্পন হলে এই শহরগুলোর পরিণতি কল্পনা করাও কঠিন।

যেহেতু ভূমিকম্পের সেই অর্থে কোনো আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়, তাই এর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে টেকসই নগর নিশ্চিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষার প্রসার ঘটানো এখন সময়ের দাবি। একটি শহর তখন টেকসই হয়, যখন তা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। আর এই সক্ষমতা অর্জন করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষায়িত জ্ঞান অপরিহার্য। এটি কেবল তাত্ত্বিক বিষয় নয়, বরং বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনার এক সমন্বয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা জানেন, কীভাবে মাটির গঠন পরীক্ষা করতে হয় এবং হ্যাজার্ড ম্যাপ তৈরি করে এলাকার বিপদাপন্ন অবস্থা যাচাই করতে হয়।

নগর-পরিকল্পনায় এবং ভবন নির্মাণে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে এই জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-১১ অর্জনেও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বা ডিআরআরের কোনো বিকল্প নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পাস করা একজন গ্র্যাজুয়েট জানেন, কীভাবে প্রি-ডিজাস্টার এবং পোস্ট-ডিজাস্টার পরিকল্পনা সাজাতে হয়। ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজ কীভাবে সমন্বয় করতে হবে এবং কীভাবে দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করা যাবে, সে বিষয়ে তাঁদের স্বচ্ছ ধারণা থাকে। তাই কেবল উদ্ধারকর্মী হিসেবে নয়, বরং পলিসিমেকার কিংবা নীতিনির্ধারক হিসেবেও এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা কাজে আসতে পারেন।

তবে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। জাপানের মতো আমাদের দেশেও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। ভূমিকম্পের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদার বাহিনী পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন। তাই সাধারণ মানুষকে বেসিক লাইফ সাপোর্ট এবং সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

প্রকৃতি বারবার আমাদের সতর্ক করছে। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ না করি, তবে ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দিতে হবে। একটি দুর্যোগ-সহনশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জ্ঞানভিত্তিক প্রস্তুতি ও জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

ইমরান খান

যেখানে মুক্তিযুদ্ধ বেঁচে থাকে

মা কুকুর ও তার আটটি ছানা

যেথায় হাওয়ায় ভাসে ফুলের কান্না

মিসরের আরেকটি নামকাওয়াস্তে ভোট

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কি থাকছে

চীন-আমিরাত সামরিক সখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

শাপলাপাতা মাছ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভেতর-বাহির

ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি