যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান এই ৩১ বাংলাদেশি। এরপর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের ব্র্যাকের পরিবহন ও জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়।
ফেরত আসা এই ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশ নোয়াখালীর। এ ছাড়া সিলেট, ফেনী, শরিয়তপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা রয়েছেন।
ফেরত আসা এই বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে প্রায় ৬০ ঘণ্টা হাতে হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে দেশে আনা হয়। ঢাকা বিমানবন্দরে এনে তাঁদের শিকলমুক্ত করা হয়। এর আগে চলতি বছরে ২২৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। তাঁদের বেশির ভাগকে একইভাবে হাতকড়া ও শিকল পরানো হয়েছিল।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, ‘দেশে ফেরত আসা এই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, এই ৩১ জনের মধ্যে অন্তত সাতজন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে ব্রাজিল গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য আবেদন করলে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নথিপত্রহীন কাউকে ফেরত পাঠানোটা হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে রাখার ঘটনা অমানবিক।’
শরিফুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, ব্রাজিলে যাঁদের কাজের নামে পাঠানো হচ্ছে, তাঁদের অধিকাংশ ব্রাজিল থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। এ জন্য একেকজন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করছেন, কিন্তু ফিরছেন শূন্য হাতে। যে এজেন্সি তাঁদের পাঠিয়েছিল এবং যাঁরা এই অনুমোদনপ্রক্রিয়ায় ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। নতুন করে ব্রাজিলে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারের সতর্ক হওয়া জরুরি।’
এদিকে, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও জোরদার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
এর আগে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৩৯ জন ও ৮ জুন আরেকটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। তারও আগে চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ২২০ ছাড়িয়েছে।
মার্কিন অভিবাসন আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।