নতুন বাড়ি মানেই এক দারুণ শিহরণ! তাই সে বাড়িতে ওঠার বিষয়টিও হয় বিশেষ। নতুন বাড়িতে ওঠার সঙ্গে সৌভাগ্য বিষয়টির এক অদৃশ্য যোগাযোগ থাকে বলে মনে করে অনেকে। ফলে সবাই চায়, সেই বাড়ি সৌভাগ্যে ভরে থাক, ভরে থাক ইতিবাচক শক্তিতে। এ জন্য বিভিন্ন দেশে বা সংস্কৃতিতে বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলে মানুষ। অধিবাসীদের ধারণা, নতুন বাড়িতে প্রবেশের সময় প্রথাগত নিয়মকানুন মানলে কিংবা সেই কাজগুলো করলে বাড়িতে সৌভাগ্য বিরাজ করে।
চলুন, দেখে নেওয়া যাক তেমন কিছু নিয়মকানুন।
দরজা, বারান্দা ও জানালায় নীল রং দক্ষিণ আমেরিকায়
দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসরত আফ্রিকান-আমেরিকানরা মনে করে, খারাপ আত্মারা পানি অতিক্রম করতে পারে না। পানির রং নীল বলে সেখানকার মানুষ বাড়ির সদর দরজা, বারান্দা ও জানালায় নীল রং করে। তাদের বিশ্বাস, মন্দ আত্মারা এই নীল রং অতিক্রম করে বাড়িতে প্রবেশ করবে না।
এই অঞ্চলের অধিবাসীরা চুনের সঙ্গে নীল রং মিশিয়ে ব্যবহার করে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। চুনের সঙ্গে রং মেশানোর কারণে বাড়ি থেকে মশা ও উড়ন্ত পোকা দূরে থাকে।
চীনের মানুষ ফল কেনে ও উপহার দেয়
চীনা ঐতিহ্য অনুযায়ী ফল সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই পরিবার-পরিজনের কেউ নতুন বাড়ি করলে বা নতুন বাড়িতে উঠলে উপহার হিসেবে তাদের ফল দেওয়া হয়। ফলের মধ্য়েও আবার বিশেষত্ব রয়েছে। সবাইকে সব ধরনের ফল উপহার দেওয়া হয় না। কার জন্য কী কামনা করা হচ্ছে, সে অনুযায়ী ফল উপহার দেওয়া হয়। এই যেমন, সমৃদ্ধির জন্য কমলা, সুযোগের জন্য ডালিম, সুস্বাস্থ্যের জন্য পিচ এবং সুরক্ষার জন্য আপেল দেওয়া হয়।
ফলের পাশাপাশি, ফলের গাছ বা গাছপালাও উপহার পায় বাড়ির নতুন মালিকেরা। গৃহ প্রবেশের দিন বাড়িতে এ ধরনের ফল থাকা আবশ্যক। এ ছাড়া তারা নতুন বাড়িতে ওঠার সময় গাছ রোপণ করে।
রাশিয়া ও জার্মানির মানুষ বাড়ির প্রথম বাজারে রুটি ও লবণ কেনে
রাশিয়া ও জার্মানির রীতি অনুসারে, নতুন বাড়িতে উঠে প্রথম যে বাজারের তালিকা তৈরি করা হয়, তাতে অবধারিতভাবে থাকে রুটি ও লবণ। বাড়ির লোকেরা যেন কখনো ক্ষুধার্ত না থাকে, সে জন্য রুটি কেনা হয়। আর নেতিবাচক শক্তি শুষে নিয়ে জীবন যেন তরতাজা করে রাখা যায়, সে জন্য এই দুই দেশের মানুষ কেনে লবণ। অনেকে নতুন বাড়ির মালিককে এই দুটো জিনিস উপহার হিসেবেও দেয়।
কোরিয়ার রীতি শিম ছিটিয়ে দেওয়া
কোরিয়ায় নতুন বাড়িতে লাল শিম ছড়িয়ে দেওয়া হয় মন্দ আত্মাদের তাড়িয়ে ভাগ্য ফেরাতে। এশিয়ার অনেক দেশের মতো কোরিয়াতেও লাল সৌভাগ্যের রং হিসেবে পরিচিত।
ধূপ দিয়ে নতুন বাড়িকে আশীর্বাদ করার নিয়ম ইতালিতে
অনেক সংস্কৃতিতে নতুন বাড়িতে প্রবেশের দিন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। ইতালিতে স্থানীয় পুরোহিত ধূপ দিয়ে নতুন বাড়িকে আশীর্বাদ করেন। এরপর বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয় সে বাড়িতে।
ডান পা প্রথমে দিয়ে নতুন বাড়িতে ওঠে ভারতের মানুষ
নতুন বাড়িতে প্রবেশের সময় প্রথম চৌকাঠের ভেতরে দেওয়া হয় ডান পা। ভারতের মানুষ মনে করে, এতে সৌভাগ্য আসে। বিয়ের পর নতুন বউ বাড়িতে প্রবেশ করে ডান পা প্রথমে দিয়ে।
ইংল্যান্ডে করা হয় নতুন ঝাড়ু ব্যবহার
ইংল্যান্ডে নতুন বাড়িতে প্রবেশের সময় পুরো ঝাড়ু সঙ্গে করে আনা নিষেধ। পুরোনো ময়লা, পুরোনো ভাগ্য, পুরোনো আত্মাসহ আরও নেতিবাচক শক্তি দূর করার জন্য পুরোনো ঝাড়ুর পরিবর্তে নতুন ঝাড়ু ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে যুক্তরাজ্যে। এ জন্য নতুন বাড়িতে ওঠা মানে, সঙ্গে নতুন একটি ঝাড়ু নিয়ে প্রবেশ করা।
উত্তর ইউরোপে ঘর উষ্ণ রাখার প্রতীকী প্রথা আছে
উত্তর ইউরোপে নতুন বাড়িতে ওঠার দিন ঘরের ফায়ার প্লেসে আগুন ধরানো হয়। সঙ্গে মোমবাতি জ্বালিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে ঘরের ঠান্ডা কেটে গিয়ে একটা আরামদায়ক তাপমাত্রা বিরাজ করে; পাশাপাশি মন্দ আত্মারাও পালিয়ে যায় বলে তাঁদের ধারণা।
ভারত, চীন ও পারস্যে ডালিমগাছ রোপণের প্রথা আছে
ডালিম উর্বরতার প্রতীক। পরিবার গঠন করতে ইচ্ছুক দম্পতিদের নতুন বাড়ির কোথাও এই গাছ লাগানো হলে সমৃদ্ধির পাশাপাশি সন্তান-সন্ততি লাভের ইচ্ছাও পূর্ণ হয় বলে এসব দেশের অধিবাসীরা মনে করে। একসময় আমাদের দেশেও নতুন বাড়ি করার পর সে বাড়ির কোথাও একটি ডালিমগাছ লাগানো হতো। সে জন্য গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে একটি ডালিমগাছের দেখা মিলত।
এসবের বাইরেও বিভিন্ন দেশে নতুন বাড়ির মেঝেতে লবণ ছিটিয়ে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এতে করে মন্দ আত্মারা বিদায় নেয় বলে মনে করা হয়। পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে নতুন বাড়িতে ওঠার পর ওয়াইনের নতুন বোতল খুলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তা উপভোগ করা হয়।
সূত্র: আরমিশজ