হোম > জীবনধারা > জেনে নিন

ঘর অন্ধকার করে ঘুমান, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে যাবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 

ঘুমের সময় আলোর সংস্পর্শ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। ছবি: পেক্সেলস

ঘর অন্ধকার না হলে অনেকে ঘুমাতে পারেন না। অনেকের আবার মৃদু আলো জ্বলে উঠলেই ঘুম ভেঙে যায়। ফলে শোয়ার ঘরের ইন্টেরিয়র নিয়ে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। ভাবনা হবে না কেন? নতুন একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ঘুমের সময় আলোর সংস্পর্শ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে।

বেশির ভাগ মানুষ জানেন, ভালো ঘুমের জন্য অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশ দরকার। এটি নিছক প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসা জ্ঞানের কথা নয়। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখন ভীষণ মজবুত। অন্ধকার পরিবেশে ঘুমের গুরুত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল বিভিন্ন গবেষণা। যেখানে এমন তথ্য একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গবেষকেরা বলছেন, ঘুমের সময় পারিপার্শ্বিক কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শ মস্তিষ্কে চাপ তৈরি হয়, যা ধমনিতে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। আর এই ধমনির প্রদাহ বা ব্যথাই ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সায়েন্টিফিক সেশনস ২০২৫-এ এ গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়েছে। যদিও এটি এখনো কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। তবে এর প্রাথমিক ফলাফল স্বাস্থ্যের জন্য গভীর অন্ধকার ঘুমের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরছে।

যেভাবে কৃত্রিম আলো হৃদ্‌রোগের জন্ম দিচ্ছে

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ৪৬৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ২০০৫-০৮ সালের মধ্যে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের পরিবেশে আলোর মাত্রা পরিমাপ করতে গবেষকেরা স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করেন। ফলাফলে দেখা গেছে, রাতে কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শ যত বেড়েছে, পরবর্তী সময়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও তত বেড়েছে। আলোর তীব্রতা বৃদ্ধির পরিমাপকের বিচ্যুতির কারণে পরবর্তী পাঁচ বছরে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী ১০ বছরে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে ২২ শতাংশ।

ভালো ঘুমের জন্য অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশ দরকার। ছবি: পেক্সেলস

গবেষণাটিতে আরও দেখা যায়, যাঁরা পরিবেশগত বা সামাজিক বিভিন্ন চাপ, যেমন ট্রাফিকের শব্দ বা নিম্ন আয়ের সমস্যা নিয়ে বসবাস করেন, তাঁরা আলোর কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আরও বেশি সংবেদনশীল। সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির ঘুম বিশেষজ্ঞ জোনাথন সিডেরনায়েস জানান, মানুষ ও প্রাণীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কৃত্রিম আলো কেবল বিপাক নয়; বরং প্রদাহকেও প্রভাবিত করে একাধিক স্নায়ু শারীরবৃত্তীয় ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে অংশগ্রহণকারীরা ঘরের সাধারণ আলোতে ঘুমিয়েছিলেন, তাঁদের হার্ট রেট বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি তাঁদের গভীর ঘুম কমে গিয়ে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিষ্কের যোগসূত্র

হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ড. জেন মর্গান এই প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করেন, ‘প্রদাহ বা ব্যথা হলো চাপের ফল এবং এই প্রদাহই এথেরোস্ক্লেরোসিস বা ধমনি শক্ত হওয়ার প্রাথমিক চালক, যা হৃদ্‌রোগ এবং স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘হৃদয় ও মস্তিষ্ক একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে যা ঘটে, মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলোতেও একই ঘটনা ঘটে।’

অন্ধকার পরিবেশ শরীরকে মেলাটোনিন তৈরি করার সংকেত দেয় এবং রক্তচাপ কমানোসহ শরীরের প্রক্রিয়াগুলোকে ধীর করে দেয়। রাতে শোয়ার ঘরে যত বেশি সময় ধরে আলো জ্বলে, রক্তচাপের এই স্বাস্থ্যকর পতন তত বেশি বিলম্বিত হয়। ড. মর্গান সতর্ক করে বলেন, ৬ ঘণ্টার কম ঘুমও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো ঘুমের বড় বাধা। তেমনই পারিপার্শ্বিক আলোও হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। ২০১৪ সালের এক গবেষণায় বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে কৃত্রিম আলো এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছিল।

সর্বোত্তম ঘুমের পরিবেশ তৈরির উপায়

বিভিন্ন গবেষণা বারবার প্রমাণ করছে, ঘুমের পরিবেশ যত অন্ধকার, স্বাস্থ্যের জন্য ততই মঙ্গলজনক। আপনার ঘুমের পরিবেশকে অনুকূল করতে কিছু টিপস অনুসরণ করা যেতে পারে।

জানালা ঢেকে দিন: আপনার ঘরে পর্দা বা শেড থাকলে তা শক্তভাবে বন্ধ করুন। যদি তা বাইরের আলো আটকাতে না পারে, তবে ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন। স্বল্প খরচে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়েও জানালা ঢেকে দেওয়া যেতে পারে।

দরজার ফাঁক বন্ধ করুন: শোয়ার ঘরের দরজার নিচে থাকা ফাঁক দিয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আলো প্রবেশ করতে পারে। দরজার ফাঁকে একটি ভাঁজ করা তোয়ালে বা কাপড় গুঁজে দিয়ে অবাঞ্ছিত আলো আটকাতে পারেন।

স্লিপ মাস্ক ব্যবহার করুন: অনেকের কাছে আই মাস্ক ব্যবহার করা আরামদায়ক এবং এটি আলো প্রবেশে কার্যকরভাবে বাধা দিতে পারে।

মোশন-সেন্সিং নাইট লাইট: সব সময় জ্বলে থাকা নাইট লাইট ব্যবহার না করে, শুধু প্রয়োজনের সময় জ্বলে ওঠে এমন মোশন-সেন্সিং নাইট লাইট ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র: হেলথ লাইন

সবুজ পৃথিবীর জন্য ২০২৬: নতুন বছরে কিছু পরিবেশবান্ধব সংকল্প নিন

জেন-জি প্রজন্ম কি আসলে ভীত?

আজকের রাশিফল: প্রেমের সম্ভাবনা নষ্ট করবে অহংকার, সময় নিয়ে দাঁত মাজুন

২০২৬-এর ডায়েট রেজল্যুশন: নতুন বছর শুরু হোক টেকসই অভ্যাস নিয়ে

মাথার ওপর মরুকরণ: কেন বিশ্বজুড়ে কমছে পুরুষের চুলের ঘনত্ব

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

রান্নায় অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ব্যবহার কতটা নিরাপদ বা কতটা ঝুঁকি

জাপানিরা কেন কাঁচা ডিম খায়!

কোন খাবারে কীভাবে রসুন ব্যবহার করবেন, জেনে নিন

নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক কি আসলেই আলাদা? গবেষকেরা কী বলছেন