বিয়ে জীবনের অন্যতম সুন্দর মুহূর্ত হলেও এর ব্যয় অনেক সময় দম্পতিদের জন্য বড় চাপ হয়ে দাঁড়ায়। ভেন্যু, সাজসজ্জা, খাবার, বিনোদন, পোশাক—সব মিলিয়ে বাজেট বেশ বেড়ে যায়। অবশ্য বিয়ের আয়োজন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাওয়াকে খুব সাধারণ ঘটনা হিসেবে দেখা হয় আমাদের দেশে। কিন্তু কৌশল জানা থাকলে বিয়ের খরচেরও লাগাম টেনে ধরা যায় স্মার্ট উপায়ে।
অফ সিজন বেছে নিন
সাধারণত ঈদের মতো বড় ছুটি এবং শীতকালে বিয়ের চাপ বেশি থাকে। এই মৌসুমে ভেন্যু, ক্যাটারিং, সাজসজ্জা, মেকআপ, এমনকি ফটোগ্রাফির চাহিদাও বেড়ে যায়। চাহিদা বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবে খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে পুরো বাজেটে। তাই পরিকল্পনা করার সময় অফ সিজন বেছে নেওয়া ভালো কৌশল। এ সময়ে ভেন্যু বুকিং থেকে শুরু করে খাবার, সাজসজ্জা, মেকআপ, গাড়িভাড়া ইত্যাদি প্রায় সব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছাড় পাওয়া যায়। অনেকে তখন বিশেষ অফার ও বান্ডেল প্যাকেজও দেয়।
একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠান ও রিসেপশন করুন
সম্ভব হলে বিয়ে ও রিসেপশন একই ভেন্যুতে আয়োজন করুন। তা না হলে অন্তত হাঁটা দূরত্বের মধ্যে রাখুন। এতে অতিথিদের জন্য আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হয় না। ফলে গাড়িভাড়া, জ্বালানি, চালক—এসব খরচ কমে যায়। একই সঙ্গে ক্যাটারিং, সাজসজ্জা, ফটোগ্রাফি বা সাউন্ড-লাইট টিমকে বারবার সরঞ্জাম সরাতে হয় না বলে সময় ও শ্রম —দুটোই সাশ্রয় হয়।
অতিথির সংখ্যা কমিয়ে আনুন
অতিথির সংখ্যা যত বাড়ে, বাজেটও তত বেড়ে যায়। কারণ, বেশির ভাগ ক্যাটারিং মাথাপিছু হিসেবে খাবারের খরচ নির্ধারণ করে। এর মধ্যে খাবার, পানীয়, সার্ভিস স্টাফসহ নানান খরচ যুক্ত থাকে। তাই আশপাশের পরিচিত সবাইকে নিমন্ত্রণ না করে চেষ্টা করুন পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করার।
ফুল পুনরায় ব্যবহার করুন
অনুষ্ঠানের ফুলগুলো একবারই ব্যবহার করার পরিবর্তে পুনর্ব্যবহার করা যায়। বিয়ের মঞ্চ বা ফুলের আর্চে ব্যবহার করা ফুলগুলোকে পরে রিসেপশনের ফটো কর্নারে সাজানো যেতে পারে। এর ফলে অতিথিরা আরও সুন্দর ছবি তুলতে পারবে। এ ছাড়া চারপাশের পথে রাখা ফুলগুলোও পরে ওয়েলকাম টেবিলে ব্যবহার করা যায়। এতে শুধু অর্থ সাশ্রয় হয় না, ফুলগুলোকে আরও দীর্ঘ সময় ধরে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যবহার করা যায়।
নিজে কিছু বানিয়ে নিন
যদি হাতের কাজ করার দক্ষতা থাকে, তাহলে বিয়ের অনেক জিনিস নিজেই তৈরি করা সম্ভব। টেবিলের সেন্টারপিস, নিমন্ত্রণপত্র বা অতিথিদের নামের কার্ড নিজে বানালে খরচ অনেকটা কমানো যায়। এতে শুধু অর্থই সাশ্রয় হয় না, আয়োজনটি আরও বিশেষ হয়ে ওঠে। বন্ধু বা পরিবারের সহায়তাও নিতে পারেন। এতে কাজের পরিমাণ ও চাপ কমে যায়। কম বয়সী ছেলেমেয়েদের এ কাজে যুক্ত করুন। তাতে তারাও আনন্দে থাকবে। ছোট ছোট এই উদ্যোগগুলো মিলিয়ে পুরো বিয়ের বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
স্টেশনারি ডিজাইন অনলাইনে করুন
অনেক ফ্রি ডিজাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি নিজে দৃষ্টিনন্দন নিমন্ত্রণপত্র, মেনু বা অন্যান্য সজ্জার জিনিস তৈরি করতে পারবেন। এতে প্রফেশনাল ডিজাইনার ভাড়া করার প্রয়োজন পড়ে না বলে খরচ অনেকটা কমে যায়। এ ছাড়া ডিজাইন সম্পূর্ণ নিজের পছন্দ অনুযায়ী করা যায়। ক্যানভা বা অ্যাডোবি এক্সপ্রেসের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো শুরুতে ফ্রি অপশন দেয়, যেখানে বিভিন্ন টেমপ্লেট ব্যবহার করে খুব সহজে আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করা সম্ভব।
অপ্রয়োজনীয় ডেকর বাদ দিন
যদি অনুষ্ঠানটি প্রকৃতির মাঝে বা কোনো সুন্দর আউটডোর ভেন্যুতে হয়, তবে অতিরিক্ত সাজসজ্জার প্রয়োজন অনেক কমে যায়। চারপাশের সবুজ, ফুল-পাতা, নদী, সমুদ্র বা পাহাড়ের দৃশ্য নিজেই সজ্জায় মনোরম সৌন্দর্য এনে দেয়। এমন পরিবেশে ছোট ছোট ডিটেইলস; যেমন লাইটিং বা কয়েকটি ফুলের ব্যবস্থাপনা দিয়েই পুরো ভেন্যুতে রোমান্টিক ও দৃষ্টিনন্দন আবহ তৈরি করা যায়। এতে খরচও কমে এবং অতিথিরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি করুন
ডিজে, ফটোগ্রাফার বা ক্যাটারারের মতো পেশাদার সেবার ক্ষেত্রে সব সময় প্রয়োজন অনুযায়ী প্যাকেজ বেছে নেওয়া জরুরি। অতিরিক্ত সেবা বা সময় নেওয়ার দরকার না হলে প্যাকেজ কমিয়ে খরচ অনেকটা কমানো সম্ভব। সরাসরি সরবরাহকারীর সঙ্গে আলোচনা করলে অতিরিক্ত চার্জ কমানো বা কিছু সুবিধা পাওয়া যায়, যা বাজেট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করুন, কিন্তু অপচয় নয়। অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা দিন। অনুষ্ঠানের অনেক ত্রুটি চোখে পড়বে না।
সূত্র: টিডি স্টোরিজ