হোম > জীবনধারা > ক্যাম্পাস

সাইফুলের ব্লাড বোর্ড

সিয়াম মুনতাসির

শুরুর গল্প
ছদাহা ডটকম নামের সাইফুলের একটি স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম আছে। এর পথচলা শুরু ২০১৫ সালে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রান্তিক ও অসহায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ নানান মৌলিক অধিকার পূরণ এবং সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে সংগঠনটি। সেসব কাজ করতে গিয়ে চেনাজানা অনেকেরই অনুরোধ আসতে থাকে রক্ত বা রক্তদাতা জোগাড় করে দেওয়ার জন্য। স্বেচ্ছাসেবীরা সেই চেষ্টাও করতেন সাধ্যমতো। তবে ব্যর্থতার হার ছিল বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে রক্তদানে টেকসই ও কার্যকর একটি সংগঠনের ভাবনা আসে সাইফুলের মনে। সময়ের সঙ্গে একটু একটু করে গুছিয়েও নেন সেই ভাবনা। এর মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে জন্ম হয় ভিন্ন একটি রক্তদাতা সংগঠনের—ব্লাড বোর্ড নামে।

পরিপূর্ণ হয়ে ওঠা
সেদিনের ঘটনা এখনো চোখে ভাসে সাইফুলের। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ। তাঁর মা ভীষণ অসুস্থ। আইসিইউতে ভর্তি করাতে হবে। সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রীতিমতো ছুটে বেড়াচ্ছেন সাইফুল। এমন সময় নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষকের ফোন আসে। তাঁর খুব কাছের এক স্বজনের চিকিৎসায় রক্ত প্রয়োজন। রোগীর কিছু ডোনারের খোঁজ মিলছে না দেখে আরও বেশি জটলা পেকেছে। শেষ ভরসা ব্লাড বোর্ড। এই অবস্থায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন সাইফুল। মাকে বাঁচাবেন, নাকি মানুষ! দ্বিধা কাটিয়ে পরক্ষণেই তিনি সামলে নিলেন নিজেকে। দেরি না করে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও নির্বাহী রিয়াদুল আলমের সঙ্গে মিলে খোঁজ শুরু করলেন রক্তদাতার। মিলেও যায় একসময়। পরে সেই রক্তদাতাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে ক্ষান্ত হন তাঁরা।

মা ও মানুষের পরীক্ষায় সেদিন উতরে গিয়েছিলেন ঠিকই, তবে সংগঠনের কাজের পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে লাগলেন সাইফুল। উদ্দেশ্য, অল্প সময় ও সহজ উপায়ে রোগী বা স্বজনদের কাছে রক্তদাতার খোঁজ পাওয়া। এর সহজ উপায় অনলাইন মাধ্যম। ওয়েবসাইট তো আগে থেকেই চালু ছিল। সেটিতে নতুন ও সহজ ফিচারগুলো এক এক করে জুড়তে থাকেন সাইফুল ও তাঁর দল। যার মধ্য দিয়ে ছবিসহ রক্তদাতাদের তথ্যগুলোর তালিকা আকারে খোঁজ মেলে ব্লাড বোর্ডের ওয়েবসাইটে। মর্জিমতো রক্তের গ্রুপ ও অঞ্চলভিত্তিক রক্তদাতা খোঁজারও সুযোগ রয়েছে এখানে। দাতাদের সবশেষ রক্তদানের দিনক্ষণ লেখা থাকায় বিষয়টি হয়ে উঠেছে আরও সহজ। একে তো জরুরি সময়ে সঠিক মানুষ খুঁজে পেতে ঝক্কিতে পড়ার বালাই নেই, তার ওপর খুদে বার্তা বা ফোনকলের মাধ্যমে চটজলদি যোগাযোগ সম্ভব রক্তদাতার সঙ্গে। এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষের সহায়তা ছাড়াই রক্তদাতা হাজির হবেন রোগীর জীবন বাঁচানোর তাগিদে। রক্তদাতার খোঁজ না মিললেও ভয় নেই। হটলাইনে কল করে স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তা নিয়েও রক্তদাতার খোঁজ মিলতে পারে। সেই সঙ্গে নানান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্লাড ব্যাংকসমেত থ্যালাসেমিয়া এবং রক্তদান বিষয়ে খুঁটিনাটি সেবা ও পরামর্শ মেলে ব্লাড বোর্ডে। সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ একটি রক্তদান সেবা চালু করেছে সংগঠনটি।

ব্লাড বোর্ডের খুঁটিনাটি
মানবকল্যাণে সাইফুল তো আছেনই; সঙ্গে ব্লাড বোর্ড দেখভালের দায়িত্ব কাঁধে আছে আরও ছয় স্বেচ্ছাসেবীর। অন্য সংগঠন (ছদাহা ডটকম) থেকেও শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সক্রিয়ভাবে কাজ করেন এতে। রাত-দিন এক করে যুক্ত রয়েছেন হাজারের মতো নিবন্ধিত রক্তদাতা। কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মের আওতায় থাকা প্রায় ১৫ হাজার সদস্যের কথা ভুলে গেলে চলবে না। জরুরি প্রয়োজনে তাঁরাও সাড়া দেন রক্তদানে।

সব মিলিয়ে গেল চার বছরে সাড়ে তিন হাজার মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন সাইফুল ও তাঁর সংগঠন। ব্লাড বোর্ড ওয়েবসাইট উন্নয়নে তহবিল দিয়ে সহায়তা করেন লন্ডনপ্রবাসী বেহজাদ শারমিন। রক্তদান ছাড়াও রক্তের গ্রুপ শনাক্ত ক্যাম্প, শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, পেশাজীবীদের রক্তের সহায়তা, রক্তদাতা সম্মাননা, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদ্‌যাপনসহ নানান কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে সংগঠনটি।

সাইফুলের ইচ্ছা, রক্তদান ও গ্রহণকে খুব সহজ ও যুগোপযোগী করার জন্য চলমান ওয়েবসাইটকে ওয়েব পোর্টালে রূপান্তর করবেন। দেশের সব কটি ইউনিয়ন ও উপজেলার রক্তদাতারা সেখানে সংযুক্ত থাকবেন এবং সেসব প্রক্রিয়া তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে অঞ্চলভিত্তিক দলগুলো। চট্টগ্রামে রক্ত 
নিয়ে কাজ করা সব ব্লাড ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানকে ব্লাড বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত করারও পরিকল্পনা আছে তাঁর। ব্লাড বোর্ডের রক্তদান কর্মসূচি গতিশীল করে তুলতে চলছে একটি মানসম্মত অ্যাপস তৈরির উদ্যোগও।  

পড়াশোনা আর সেবামূলক এসব কাজ নিয়ে ভালোই আছেন সাইফুল ইসলাম। তবে সংগঠনের কাজের চাপে মাঝে মাঝে সাইফুল নিজেই বিগড়ে যান।

উচ্চশিক্ষা কোনো বিশেষ শ্রেণির জন্য নয়, এটি সবার অধিকার

পাঠকবন্ধুর মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন

উত্তরার গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল: স্বর্ণ রৌপ্য ব্রোঞ্জসহ ৭ অ্যাওয়ার্ড জয়

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানে বাংলাদেশি মিথিলার পথচলা

কৃষক বাবার স্বপ্নপূরণে মেডিকেলে পড়ছেন উর্মি

জকসু নির্বাচন: তিন দিনেও প্রকাশ করা হয়নি ব্যালট নম্বর, প্রচারে নেমে বিপাকে প্রার্থীরা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪-এর আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে: জবি উপাচার্য

এআইইউবির ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

শিক্ষার্থীদের বিজয় দিবসের ভাবনা

দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ রাতে পড়াশোনা