প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ দুই ধরনের খাবারেই আয়রন পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেন, গরুর মাংসই আয়রনের প্রধান উৎস। সত্যি বলতে, রান্না করা ৩ আউন্স গরুর কিমা মাংসে থাকে প্রায় ২.২৭ মিলিগ্রাম আয়রন, যা দৈনিক চাহিদার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে আপনি যদি নিরামিষ খান বা লাল মাংস পছন্দ না করেন, তবুও চিন্তার কিছু নেই। আরও বেশ কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো লাল মাংসের তুলনায় অনেক বেশি আয়রন সরবরাহ করে।
মুরগির কলিজা
আয়রন: ৯.৮৬ মিলিগ্রাম
পরিমাণ: ৩ আউন্স
মুরগির লিভার আয়রনের দারুণ উৎস এবং এতে থাকা আয়রন শরীরে খুব সহজে শোষিত হয়। প্রাণিজ খাবারের হিম আয়রন শরীর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারে, যেখানে উদ্ভিজ্জ খাবারের আয়রন শোষিত হয় প্রায় ১৭ শতাংশ।
ডাল
আয়রন: ৬ মিলিগ্রাম
পরিমাণ: ১ কাপ
আয়রনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ উৎসগুলোর একটি ডাল। গরুর মাংসের তুলনায় এতে প্রায় দিগুণ আয়রন থাকে, তাই যারা শাকসবজি ও উদ্ভিজ্জ খাবারের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য ডাল বিশেষ পুষ্টির উৎস। যদিও ডালে থাকা আয়রনটি নন-হিম, ফলে শরীর এটিকে ধীরে শোষণ করে, তবুও পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাল খেলে দৈনিক আয়রনের চাহিদা ভালোভাবে পূরণ হয়। ডাল নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখার আরও অনেক সুবিধা আছে। এতে প্রোটিন, ফাইবার, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে, যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
টোফু
আয়রন: ৬ মিলিগ্রাম
পরিমাণ: ১ কাপ
সয়াবিন থেকে তৈরি টোফু আয়রনের দারুণ উৎস এবং গরুর স্টেকের তুলনায় এতে দ্বিগুণ আয়রন থাকে। নিরামিষভোজীদের জন্য এটি একটি মূল প্রোটিন উৎস। টোফু ভাজা, বেক করা বা স্মুদি সব ধরনের খাবারেই যোগ করা যায়।
পালংশাক
আয়রন: ৬ মিলিগ্রাম
পরিমাণ: ১ কাপ
পালংশাকে গরুর মাংসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আয়রন থাকে। তাই যারা বেশি সবজি খেতে চায় বা বাজেটের মধ্যে পুষ্টি নিশ্চিত করতে চায়, তাদের জন্য পালংশাক দারুণ বিকল্প। এটি সহজলভ্য, সস্তা এবং দ্রুত রান্না করা যায়। পালংশাকের আরেকটি সুবিধা হলো, এতে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও প্রচুর থাকে, যা সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। সালাদ, ভাজি, স্যুপ অথবা স্মুদিতেও পালংশাক সহজেই ব্যবহার করা যায়, যা দৈনন্দিন খাবারে পুষ্টি যোগ করে।
ডার্ক চকলেট
আয়রন: ৪ মিলিগ্রাম
পরিমাণ: ২ আউন্স
চকলেটে আয়রন থাকে, এ তথ্য অনেকের কাছেই অজানা। কোকো বিনে স্বাভাবিকভাবেই আয়রন থাকে, আর সেখান থেকে তৈরি হওয়া ডার্ক চকলেটে এই আয়রনের ঘনত্ব আরও বেড়ে যায়। তাই ডার্ক চকলেট শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ। সাধারণ মিল্ক চকলেটের তুলনায় ডার্ক চকলেটে কোকোর পরিমাণ বেশি থাকায় এতে আয়রনের মাত্রাও বেশি থাকে। যারা তুলনামূলকভাবে কম চিনি খেতে চায়, তারা ডার্ক চকলেট বেছে নিতে পারে। আরও পুষ্টিকর উপায় হলো ডার্ক চকলেটের সঙ্গে চিনিবিহীন বাদাম মাখন খাওয়া। এতে শুধু আয়রনই নয়, ভালো মানের ফ্যাট ও প্রোটিনও পাওয়া যায়। এটি খাবার হিসেবে মুখরোচক এবং একই সঙ্গে শরীরের জন্য উপকারী।
সেদ্ধ টমেটো
আয়রন: ৪ মিলিগ্রাম
পরিমাণ: ১ কাপ
তাজা টমেটোতে আয়রন কম, কিন্তু রান্না বা সেদ্ধ টমেটোতে আয়রন অনেক বেশি। সেদ্ধ টমেটোতে ভিটামিন সি থাকে, যা উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে আয়রন শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। স্যুপ, সস ও পাস্তা রান্নায় এটি খুব কার্যকর।
আয়রন শোষণ বাড়ানোর উপায়
ভিটামিন সির সঙ্গে খাবেন: ক্যাপসিকাম, লেবুর রস, মাল্টার রস আয়রন শোষণ বাড়ায়।
যেসব খাবার শোষণ কমায়, সেগুলো খেয়াল রাখুন: দুগ্ধজাত পণ্যের ক্যালসিয়াম এবং শস্যদানার ফাইটেট আয়রন শোষণ কমাতে পারে।
হিম আয়রন বনাম নন-হিম আয়রন: প্রাণিজ উৎসের হিম আয়রন সহজে শোষিত হয়। নিরামিষভোজীরা নন-হিম উৎস বেশি খায়, তাই তাদের সচেতনভাবে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিতে হয়।
সূত্র: হেলথ