আমাদের বয়স যত বাড়ে, ত্বকের লাবণ্যও তত কমতে থাকে। পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ত্বক নির্জীব ও নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন কমে গেলে তাতে বলিরেখা দেখা দেয় আবার তার উজ্জ্বলতা কমে গিয়ে কুঁচকে বা ঝুলেও যেতে পারে।
কোলাজেনের ঘাটতি মিটিয়ে ত্বকের টান টান ভাব ফিরিয়ে আনতে এখন বাজারে কোলাজেন ক্রিম, শিট মাস্ক ও প্যাক পাওয়া যায়। বাজার চলতি এসব সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহার না করেও ত্বকের কোলাজেনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু কী এই কোলাজেন, যার কমতিতে ত্বকে নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়? এর উত্তর হলো, কোলাজেন এমন একটি প্রোটিন, যা ত্বক টান টান ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। তবে বয়স বাড়লে প্রাকৃতিক কারণে কমতে থাকে এর উৎপাদন। তা ছাড়া সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব, ধোঁয়া ও দূষণসহ নানা কারণে যেকোনো বয়সী মানুষের ত্বকেই কোলাজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
এবার আসা যাক আসল প্রসঙ্গে—ঘরোয়া টোটকায় যেভাবে ত্বকের কোলাজেনের মাত্রা ঠিক রাখবেন। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি কিছু ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহারে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কোন উপাদানে তৈরি সেই জাদুকরী ফেসপ্যাক? জেনে নিন এখানে—
টক দইয়ের সঙ্গে মেশান মাত্র দুটি উপাদান
ত্বক নরম ও সুন্দর রাখতে টক দই এবং মধুর মিশ্রণ যে দারুণ কার্যকর, সে কথা কারওরই অজানা নয়। ত্বকের কোলাজেনের ঘাটতি পূরণেও এই উপাদানগুলো খুব ভালো কাজ করে। একটি পাত্রে ১ টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে আধা চা-চামচ মধু ও আধা চা-চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন। এবার ত্বক ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর এ প্যাকটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে মেখে নিন। ১০ মিনিট রেখে পানির ঝাপটায় ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এ প্যাকটি কিন্তু পুরো শরীরে ব্যবহার করতে পারেন।
পেঁপে ও মধুর ফেসপ্যাক
পেঁপে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এক চামচ পেঁপের ক্বাথ নিয়ে তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ক্রিমের মতো বানিয়ে নিন। ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার পর মিশ্রণটি ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। বিশেষত শীতের দিনে রুক্ষ ত্বকের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি প্যাক।
ডিম, ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ
প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিম। এতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। একটি পাত্রে ডিমের সাদা অংশ নিয়ে তার সঙ্গে আধা চা-চামচ অলিভ অয়েল ও একটি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তরল মিশিয়ে নিন। বাইরে থেকে ফিরে মুখ ক্লিনজার দিয়ে ধোয়ার পর মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করে রেখে দিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এ প্যাক ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
জেনে রাখা ভালো
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, অতিরিক্ত ধূমপান, বয়স বাড়তে থাকা, শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিন ‘সি’র অভাব ত্বকে কোলাজেনের ঘাটতির প্রধান কারণ। এর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ত্বক টান টান রাখতে শুধু ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। নিয়ম করে ক্লিনজিং, টোনিং এবং ময়শ্চারাইজিং অর্থাৎ সিটিএম রুটিন মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি মৌসুমি ফল ও শাকসবজি খাওয়ায় মনোযোগ দিতে হবে। নজর রাখতে হবে দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করার দিকে। এসব মেনে চলার পরও যদি ত্বক অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে ওঠে, কিংবা বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে, তাহলে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যের সমস্যা থাকলেও ত্বকে কোলাজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বলিরেখা কমাতে ইদানীং নানা রকম চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে। ত্বক বিশেষজ্ঞ আপনার ত্বকের অবস্থা বুঝে সেসব চিকিৎসা দেবেন।
সূত্র: অনলি মাই হেলথ ও অন্যান্য