সকাল সকাল ফোনটা বাজতেই ঘুম ভেঙে গেল নীলাদ্রির। তারপর খুব অল্প সময়ে তৈরি হয়েই দিল দৌড়। ভ্রু কুঁচকে যখন তার জন্য অপেক্ষা করছিল, প্রিয়তার চোখের সামনে ভেসে উঠল একটি ফুলের তোড়া। এরপরের গল্পটা একসঙ্গে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার।
এমন অসংখ্য গল্প আছে আমাদের চারদিকে। কিন্তু সবার গল্পই কি এত সহজ-সরল আর সত্যি হয়ে যাওয়া স্বপ্নের মতো? তা তো নয়। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতায় এসব গল্পের অনেক সংস্করণ আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও চরিত্র আর অবস্থা বদলে তৈরি হতে থাকবে। এসব ‘অন্তর্গত’ জটিলতায় পড়ে খাবি খেতে না চাইলে সহজ করে ফেলতে হবে সবকিছু।
বন্ধুত্ব পৃথিবীর সুন্দরতম সম্পর্কের একটি। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক ভালোবাসায় গড়ানোর ব্যাপারটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সহপাঠীদের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব সূচনা করে সম্পূর্ণ নতুন একটি সম্পর্ক। গ্রুপের মধ্যে ভালো বন্ধু সবাই। কিন্তু তার মাঝেও কেউ যেন কারও প্রতি একটু বেশিই খেয়াল রাখছে। একজনের চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা আর নিরাপত্তা—সবকিছু নিয়েই যেন একটু বেশি উদ্বিগ্ন থাকে অন্যজন। অনেক সময় অন্য দিক থেকেও একই রকম সাড়া পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপে দুজনে একসঙ্গে পা রাখে। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
প্রেমে পড়াটাই সব নয়। দুজনকে পারস্পরিক বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। একে অন্যের পছন্দ-অপছন্দ ও ধ্যান-ধারণার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। পারস্পরিক সহনশীলতা ও মূল্যবোধ সম্পর্ককে আরও সহজ করে তোলে। সবচেয়ে বড় দিক হলো, একে অন্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
অনেক সময় ব্যাপারটা একতরফা হতে পারে। একজনের প্রতি অতিরিক্ত খেয়ালে অন্যজনের বিরক্তি ও অস্বস্তি হতে পারে। হয়তো একজন শুধু বন্ধুর চোখেই দেখছে, যেখানে অন্যজন বন্ধুত্বকে ভালোবাসায় রূপ দিতে চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরাসরি কথা বলে ব্যাপারটা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। যদি দেখা যায়, বন্ধু আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং আপনি বন্ধুকে বন্ধুর দৃষ্টিতেই দেখতে চান, তাহলে তাঁকে বুঝিয়ে বলুন, বন্ধুত্বই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক, যার কোনো শেষ নেই। আজীবন আপনি তাঁর বন্ধু হয়েই থাকতে চান। সে তো আপনার বন্ধুই। দেখবেন, ঠিক বুঝে যাবে।
সুখী হয়ে বাঁচতে হলে ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকা ভীষণ প্রয়োজন। আর বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষ যদি হয় একই ব্যক্তি, তাহলে তো কথাই নেই! এই সম্পর্ক সতেজ রাখতে হৃদয়ে রোপণ করুন পাঁচটি বীজ—বিশ্বাস, সম্মান, ধৈর্য, অনুভূতি আর মূল্যবোধ।
প্রবল অজেয় বাণী তব
একটা কথা প্রচলিত আছে, ভালোবাসার কথা বলে দেওয়ার পর নাকি ভালোবাসার রেশ বা মাদকতা কেটে যায়। কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলে অন্য কথা। প্রতিদিন প্রিয় মানুষটিকে একবার অন্তত ভালোবাসার কথা বলা প্রয়োজন। ‘ভালোবাসি’ বলা ছাড়াও নানান আচরণ ও কাজের মধ্য দিয়ে প্রিয় মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখানো যায়। এতে ভরসা ও প্রেম বাড়ে বৈ কমে না।