প্রকৃতি বিশেষ করে পাহাড়, অরণ্য যদি পছন্দ হয় তবে আজকের লেখাটি আপনারই জন্য। কারণ রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে চমৎকার একটি ভ্রমণের সুযোগ হবে আপনাদের আজ আমার সঙ্গে। এখন সময়টাও কিন্তু বনে ঘুরে বেড়াবার জন্য আদর্শ।
হেমন্ত চললেও অনেক এলাকাতেই বেশ একটা শীতের আমেজ চলে এসেছে। গাছপালায় ঠাসা কাপ্তাইয়েও বেশ আরামদায়ক একটি পরিবেশই পাবেন।
এখন নিশ্চয় জানতে চাইবেন এ সময় বনে ঘুরে বেড়াবার সুবিধা কী? বৃষ্টি না হওয়ায় অরণ্যপথে হাঁটা যেমন সহজ, তেমনি জোঁকের উপদ্রবেও পড়তে হবে না। আবার গরম কম থাকায় অনেকটা পথ হাঁটতে পারবেন অনায়াসে। প্রকৃতি এখনো বেশ সবুজ। তাই সবকিছু মিলিয়ে ভ্রমণটা আনন্দদায়ক হবে তাতে সন্দেহ নেই।
বেশ বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল। তবে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান বা কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের সীমায় পড়েছে ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো এলাকা।
চলুন তাহলে ঢাকা থেকেই যাত্রাটা শুরু করি। সরাসরি উঠে পড়বেন কাপ্তাইয়ের বাসে। বিশেষ করে বড়ইছড়ি পেরোনোর পরই কর্ণফুলী নদী আর এর দুই পাশের পাহাড় আপনার নয়ন জুড়িয়ে দেবে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে যখন গাড়িটা ছুটে চলবে, রোমাঞ্চে কাঁটা দেবে শরীর।
বিশেষ করে সীতা পাহাড়ের বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিসের ওই পাশের অংশটা ভারি সুন্দর। উঁচু উঁচু সব গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের লতা পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। খুব ভোরে রাম পাহাড়ি বিট অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে সীতা পাহাড়ের ওপরের এক গাছে ছোট কয়েকটা বিন্দুর মতো ছোটাছুটি করতে দেখে একবার চমকে উঠেছিলাম। একটু ভালোভাবে খেয়াল করতেই বুঝে যাই, বানর কিংবা হনুমানের দল, ডালে ডালে নাচানাচি করছে।
সীতা পাহাড়ের মতো রাম পাহাড়ে ওঠারও কয়েকটি পথ আছে। শুনেছিলাম ‘হাঁটু ভাঙা’ নামে পরিচিত পথটা নাকি সবচেয়ে খাড়া। আমি অবশ্য মোটামুটি সহজ একটি পথে রাম পাহাড়ে উঠেছিলাম। রাম পাহাড়ে ঘুরতে গেলে স্থানীয় কোনো বাসিন্দার সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে আপনার, যে শোনাবে গাছে চড়ায় দক্ষ লতা বাঘের গল্প। এই লতা বাঘ আসলে মেঘলা চিতা বা ক্লাউডেড ল্যাপার্ড। পরে কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে ক্যামেরা ট্র্যাপেও ধরা পড়ে আশ্চর্য সুন্দর প্রাণী মেঘলা চিতার ছবি।
এবার বরং কাপ্তাই মুখ খালের গল্প বলি। আমার মতে, কাপ্তাইয়ের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর একটি কাপ্তাই মুখ খাল। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। যেতে হয় নৌকায় চেপে। প্রথম সেখানে গিয়েছিলাম আজ থেকে এক যুগেরও বেশি আগে, ২০১২ সালে। সেবার সেগুন বাগানের পথ ধরে হাঁটার সময় হঠাৎ আকাশ কালো করে ঝড় নেমেছিল। পরে অবশ্য আরও গিয়েছি বনটিতে।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে আছে হরেক জাতের বন্য প্রাণী। বানর কিংবা হনুমান চোখে পড়ে সহজেই। খুব ভোরে যদি জঙ্গলে ঢুকতে পারেন তবে লালচে শরীরের মায়া হরিণের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। সৌভাগ্যবান হলে বন মোরগ কিংবা মথুরার দর্শনও লাভ করতে পারেন। বুনো কুকুরের আনাগোনার কথাও শোনা যায় কখনো কখনো। পাখিও আছে অনেক জাতের।
কাপ্তাই থেকে ভেতরের শর্টকাট পথে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন রাঙামাটিতে। সেখানকার কোনো হোটেল বা রিসোর্টে থেকেও কাপ্তাইয়ে ঘুরে যেতে পারবেন। তবে আমার পরামর্শ শুনলে কাপ্তাইয়ে রাতে থেকেই উপভোগ করুন অরণ্যটির সৌন্দর্য। ও একটা কথা, এখন কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীতে কায়াকিং করারও চমৎকার ব্যবস্থা আছে।
আর ঢাকা থেকে কাপ্তাই যাওয়ার সরাসরি বাস আছে। ভাড়া ৮০০ টাকা। রাতে রওনা দিলে সকালেই পৌঁছে যাবেন। কাজেই পাঠক আর দেরি কেন, কাপ্তাই ভ্রমণের জোগাড়যন্ত্র করা শুরু করে দিন।