উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড। এ দেশে ইসলামের আগমন ১৯৫০-এর দশকে। শান্তির ধর্ম ইসলাম এর পর থেকে ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে। এখানে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম ইসলামিক সোসাইটি এবং ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম মসজিদ। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় আইরিশ কাউন্সিল অব ইমামস।
ইসলাম আজ আয়ারল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। দেশটিতে দ্রুত বিকাশমান ধর্ম হিসেবে ইতিমধ্যেই ইসলাম জায়গা করে নিয়েছে। ইসলামের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে আয়ারল্যান্ডে মসজিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এই ফিচারে সেই অসংখ্য মসজিদের মধ্য কয়েকটির বর্ণনা তুলে ধরা হলো। তবে এ তালিকাটি কোনো নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে সাজানো হয়নি।
১. ডাবলিন মসজিদ: এটি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে অবস্থিত একটি মসজিদ। যা ডাবলিনের দক্ষিণ সার্কুলার সড়কের পাশে অবস্থিত। এটিই হলো আয়ারল্যান্ড ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সদর দপ্তর।
মসজিদের আগে এখানে একটি গির্জা ছিল। ১৩শ শতাব্দীর ইংরেজ গির্জার শৈলীতে ১৮৬০-এর দশকে ডোনোর প্রেসবিটারিয়ান গির্জাটি নির্মিত হয়। ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ সার্কুলার সড়কের এ ভবনটি আয়ারল্যান্ড ইসলামিক ফাউন্ডেশন কিনে নেয় এবং মসজিদে রূপান্তরিত করে। এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে।
২. ব্ল্যাকপিটস মসজিদ: আয়ারল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইসমাইল খোটওয়াল এই মসজিদের ইমাম। ১৯৯২ সালে প্রথম এই মসজিদটি একটি গুদামঘরে চালু হলেও, বর্তমানে এটি একই স্থানে নবনির্মিত একটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে। ওপরের তলাগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই মসজিদের অধিকাংশ মুসল্লিই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। যারা মসজিদের আশপাশে বসবাস করেন। এটি ডাবলিনের ব্ল্যাকপিটস, মার্চেন্ট কায়ে অবস্থিত।
৩. কর্ক মসজিদ: ২০১৩ সালের অক্টোবরে উদ্বোধন হওয়া এই মসজিদটি বেশ বড় এবং প্রায়ই এটিকে ‘মেগা মসজিদ’ বলা হয়। এর নির্মাণ ব্যয় বহন করেছে কাতার সরকার। এটি শুধু উপাসনার স্থান নয়, বরং ধর্মীয় জ্ঞান ও এর শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ারও এক প্রাণবন্ত কেন্দ্র। কর্কের অন্যান্য মসজিদের তুলনায় এটি বেশ জনপ্রিয় এবং টারামোর রোড টার্নার্স ক্রসে অবস্থিত।
৪. বালিহাউনিস মসজিদ: এটি ডাবলিনের বাইরে আয়ারল্যান্ডের প্রথম মসজিদ; যা ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয়। শের রফিক নামে এক মুসলিম ব্যবসায়ী এটি নির্মাণ করেছিলেন। যিনি একটি হালাল মাংস কারখানার মালিক ছিলেন। এর সবুজ গম্বুজের জন্য মসজিদটি সহজেই চোখে পড়ে। ভেতরে প্রায় ১৫০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি ব্লেয়ার রোডের কাছে অবস্থিত।
৫. ক্লোনস্কে মসজিদ: এটি আয়ারল্যান্ডের বৃহত্তম মসজিদ। ১৯৯৬ সালে দুবাইয়ের হামদান বিন রশিদ আল মাকতুম এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সুন্নি মতাদর্শের এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি একটি বৃহৎ ইসলামিক কমপ্লেক্সের অংশ, যেখানে নামাজের স্পেস, একটি লাইব্রেরি, মিটিং রুম, ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট, একটি রেস্তোরাঁ, একটি দোকান, লন্ড্রি সুবিধা, প্রশাসনিক অফিস এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এটি ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ডাবলিনের পাশে ফ্রিয়ারল্যান্ডে অবস্থিত।
৬. বেলফাস্ট ইসলামিক সেন্টার: উত্তর আয়ারল্যান্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রার্থনা কেন্দ্রটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কেবল ইবাদতের স্থান নয়, বরং ধর্মীয় শিক্ষা, বিয়ে, জানাজা এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। এটি বেলফাস্টের ওয়েলিংটন পার্কে অবস্থিত এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ছয়টি মসজিদের মধ্যে অন্যতম।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল ট্রায়েঙ্গেল, উইকিপিডিয়া