দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত গাছের কাঁচা অথবা শুকনো ঢাল কিংবা শেকড়কে মেসওয়াক বলে। এটি সর্বনিম্ন এক বিঘত লম্বা এবং কনিষ্ঠা আঙুল পরিমাণ মোটা হতে হয়। মেসওয়াক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুন্নত। এটি এত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত যে, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতেন। (মুসনাদে আহমাদ: ১৬০০৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সর্বশেষ আমল ছিল মেসওয়াক। মহানবীর মৃত্যুপূর্ব মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত এটা—আমার ঘরে, আমার পালার দিনে, আমার কণ্ঠ ও সিনার মাঝখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয় এবং আল্লাহ তাআলা সেসময় আমার থুতু তাঁর থুতুর সঙ্গে মিশ্রিত করে দেন।
নবী (সা.) মৃত্যুশয্যায়। তখন আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর আমার ঘরে প্রবেশ করে এমতাবস্থায় যে, তার হাতে মেসওয়াক ছিল।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমার বুকের সঙ্গে হেলান দিয়ে রেখেছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি আবদুর রহমানের দিকে তাকাচ্ছেন। এতে বুঝলাম তিনি মেসওয়াক চাচ্ছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কি আপনার জন্য মেসওয়াক নেব?’ তিনি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন। আমি মেসওয়াক নিলাম। তবে মেসওয়াকটি ছিল তার জন্য শক্ত। বললাম, ‘এটি কি আমি আপনার জন্য নরম করে দেব?’ তিনি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।
আমি তা চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি ভালোভাবে মেসওয়াক করলেন। তার সামনে পাত্র/পেয়ালায় পানি রাখা ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের হাত দুটো পেয়ালায় প্রবেশ করিয়ে স্বীয় চেহারা মুছতে লাগলেন।
এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যিই কঠিন।’ অতঃপর দুই হাত ওপরের দিকে তুলে বলেন, ‘আমি উর্ধ্বলোকের মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত হতে চাই।’ এ অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হয় এবং হাত শিথিল হয়ে যায়। (সহিহ্ বুখারি: ৪৪৪৯)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নত রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।