স্বাধীনতা চাওয়া কোনো অপরাধ হতে পারে না। শোষণ, নির্যাতন ও জুলুমের প্রতিবাদ করা কোনো ভুল নয়। কিন্তু স্বাধীনতা চাওয়ার ‘অপরাধে’ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা করেছে। মা, বোন, শিশু কেউই রেহাই পায়নি। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে; নির্বিচারে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মা-বোন। মানব ইতিহাসে এমন নিকৃষ্ট ঘটনা বিরল।
নরহত্যা ও জুলুমের ভয়াবহতা
ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চরমভাবে নিন্দনীয়। নিরপরাধ মানুষ হত্যার মতো পাপ আর হয় না। নরহত্যাকারীদের স্থায়ী আবাস হলো জাহান্নাম।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীর প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়িদা: ৩২)
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এই কাজের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (জামে তিরমিজি)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যদি আসমান-জমিনের সব অধিবাসী একজন মুসলমানকে অবৈধভাবে হত্যা করার জন্য একমত পোষণ করে, তবে আল্লাহ সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)
মজলুমের স্বাধীনতাযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরাট দান ও অশেষ নেয়ামত। হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানভি (রহ.)-এর খলিফা হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা হচ্ছে জালেম আর আমরা বাঙালিরা হচ্ছি মজলুম।’
ইসলাম স্বাধীনতাযুদ্ধকে সমর্থন দেয়; দাসত্ব ও গোলামিকে নয়। সে কারণে আলেম-ওলামাদের অনেকেই পাকিস্তানি শাসকদের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন। অনেকে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের এই অবস্থান কোরআন ও হাদিস-সমর্থিত।
শুধু পাকিস্তানি হানাদারেরাই নয়, এ দেশীয় যারা তাদের সহযোগিতা করেছে, তারাও সমান অপরাধী এবং নরহত্যার দোষে দোষী। নিরপরাধ বাঙালির ওপর যারা জুলুম চালিয়েছে, তাদের জন্য মহা আজাবের সতর্কবার্তা রয়েছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘জালিমরা যা করছে, সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না। তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত, যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪৩)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালিমদের কোনো বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে। (সুরা মুমিন: ১৮)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মুয়াজ (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠান এবং তাকে বলেন, ‘মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।’ (সহিহ্ বুখারি: ২৪৪৮)। অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার হবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ২৪৪৭)
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমাদের করণীয়
মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং স্বাধীনতার মহান কারিগর। তাঁদের জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করা, তাঁদের ত্যাগ ও আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখা, তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদের সবার কর্তব্য।